নওগাঁয় গ্রামাঞ্চলে দিনে আট ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং, ভোগান্তি

লোডশেডিং
প্রতীকী ছবি

নওগাঁয় চলতি মাসের শুরু থেকেই দিনের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে গ্রামাঞ্চলে দিন-রাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। শহরাঞ্চলেও লোডশেডিং হচ্ছে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। এতে প্রচণ্ড গরমে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মানুষ।

এদিকে, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ঈদের কেনাকাটা ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। সেচের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।

আজ সোমবার সকাল ১০টায় কথা হয় ধামইরহাট পৌরসভার টিএনটিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসানের সঙ্গে। এলাকায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিদ্যুৎ চলে যায়, এরপর রাত সাড়ে আটটার দিকে আসে। আবার রাত ১০টার দিকে বিদ্যুৎ যায়, রাত সাড়ে ১১টার দিকে আসে। মধ্যরাতেও ১০ থেকে ২০ মিনিট করে কয়েকবার লোডশেডিং হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে এভাবে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে। দিন-রাত মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।

ধামইরহাট বাজার এলাকার থানা মোড়ের কাপড় ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের কেনাকাটা করার জন্য দোকানে ভিড় হচ্ছে। ক্রেতাদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মধ্যে শুরু হইছে লোডশেডিংয়ের জ্বালা। লোডশেডিং হলেই জেনারেটর চালিয়ে লাইট ও ফ্যান চালু রাখতে হচ্ছে। এতে আমাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।’

নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও সমিতি-২ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ পল্লী সমিতি-১–এর আওতায় বাণিজ্যিক, আবাসিকসহ মোট ৪ লাখ ৫৪ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। আর নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ-২–এর আওতায় বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছেন ৩ লাখ ৩৫ হাজার। তিন–চার দিন ধরে পিক আওয়ারে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা থাকছে ১৮৭ মেগাওয়াট পর্যন্ত। কিন্তু উৎপাদনকেন্দ্র থেকে চাহিদার তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ কম পাওয়া যাচ্ছে।

নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২–এর উপমহাব্যবস্থাপক রাজ্জাকুর রহমান বলেন, ‘গরম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। চাহিদা যত বাড়ছে, ঘাটতিও তত বাড়ছে। কিছুদিন ধরে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ শতভাগ ছিল। কিন্তু ১ এপ্রিল থেকে চাহিদার তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ কম বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।’

অন্যদিকে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) মাধ্যমে নওগাঁ, নজিপুর, সান্তাহার পৌরসভা এলাকাসহ নওগাঁ সদর, বদলগাছী উপজেলার কিছু গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। নেসকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ নওগাঁ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তিন-চার দিন ধরে নওগাঁয় নেসকোর গ্রাহকদের বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৩০ মেগাওয়াটের বেশি। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম পাওয়ায় নওগাঁ পৌরসভাসহ বেশ কিছু এলাকায় দিন ও রাতে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

নওগাঁ শহরের পার-নওগাঁ ধোপাপাড়া এলাকার লন্ড্রি ব্যবসায়ী মিলন চন্দ্র বলেন, ‘ঈদের আগে লন্ড্রিতে কাপড় ইস্ত্রি ও ওয়াশ করার জন্য কাস্টমাররা প্রচুর কাপড় দিচ্ছেন। কিন্তু ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ঠিক সময়ে কাপড় ডেলিভারি দিতে পারছি না।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। জেলায় বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচপাম্প রয়েছে ৪২ হাজার ৪৯৫টি। এর মধ্যে বিদ্যুৎ–চালিত সেচপাম্পের সংখ্যা ৯ হাজার ৯১৫টি।

মান্দা উপজেলার ভালাইন গ্রামে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের অপারেটর আবদুল মালেক বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী ধানের জমিত স্যাচ (সেচ) দিতে পারোছি না। লোডশেডিং না হলে যে জমিত স্যাচ দিতে দুই ঘণ্টা সময় লাগত, সেটাত অ্যাখন তিন থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগোছে। কারেন্টের অবস্থা এ রকম চলতে থাকলে ধান বাঁচানাই কষ্ট হয়ে যাবে।’