নির্বাচন কমিশনের দিকে তাকিয়ে ভোটাররা, চলছে নানা জল্পনা–কল্পনা

ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবন থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ভোটকেন্দ্র সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হয়। এতে বুথকক্ষে বিশৃঙ্খলার চিত্র ধরা পড়ে
ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি–সাঘাটা) আসনের উপনির্বাচনে আবার ভোট গ্রহণ হবে, ভোট সম্পন্ন না হওয়া কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা হবে, নাকি শুধু স্থগিত ৫১টি কেন্দ্রের পুনঃভোট হবে— তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে জল্পনা–কল্পনা চলছে। দুই উপজেলার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্র এখন এই আলোচনা। নির্বাচন কমিশন (ইসি) কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেদিকে ভোটাররা তাকিয়ে আছেন।

আজ শনিবার ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে উপনির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তবে ভোটাররা চান, আবারও ভোট হলে যেন বিশৃঙ্খলা না হয়।

আরও পড়ুন

আজ বেলা দুইটার দিকে ফুলছড়ি উপজেলার কালিরবাজার এলাকার একটি চায়ের দোকানে কথা বলছিলেন ভোটাররা। এ সময় উপজেলার গুনভরি এলাকার কলেজশিক্ষক মোসলেম উদ্দিন বলেন, উপনির্বাচন বন্ধ হয়েছে। এখন নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেবে? আবার নির্বাচন হলে কোন পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হবে, তা নিয়ে ভোটাররা উদ্বিগ্ন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন বন্ধের চার দিন পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভোটাররা পরিষ্কারভাবে কিছু জানতে পারছেন না।

কালিরবাজার এলাকার ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, সম্পন্ন হওয়া ভোটকেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকেরা। কিন্তু তাঁদের দাবি নির্বাচন কমিশন মেনে নেবে কি না, তা–ও স্পষ্ট নয়। একই এলাকার কৃষিশ্রমিক হামিদুল ইসলাম নিজের ভাষায় বলেন, ‘কাম-কাজ বন্ধ করি ভোট দিলেম। সন্ধ্যাত ক্যাটা এমপি হবি তা জানব্যার পামো। ভোট কোনা বন্ধ করি সগ মাটি হয়া গেলো। আরেকবার ভোট হলে জানি গন্ডগোল না হয়। সরকার জানি ভালো করি ব্যবস্থা নেয়।’

আরও পড়ুন

চা বিক্রেতা মোজাম্মেল হক বললেন, ‘মানসের মনোত ভয় আচে, এবারক্যা যানি ভালো ভোট হয়।’

বেলা ১১টার দিকে সাঘাটা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে একই ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। উপজেলার বোনারপাড়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ইভিএম ও সিসি টিভি ক্যামেরার কারণে উপনির্বাচন দুপুর পর্যন্ত উৎসবমুখর ছিল। মানুষের মধ্যে আস্থার জায়গা ফিরে এসেছিল। উপনির্বাচন বন্ধ করায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। নির্বাচন কমিশন এখন কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আলোচনার ঝড় বইছে। তাঁরা কমিশনের সিদ্ধান্ত জানার অপেক্ষায় আছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা উচিত।

আবার ভোট গ্রহণের বিষয়ে আজ বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবদুল মোত্তালিব।

গত বুধবার গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন চলাকালে দুপুর পর্যন্ত মোট পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে চারজন ভোট বর্জন করেন। এরপর সিসি টিভি ক্যামেরায় অনিয়ম দেখে ৫১টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। একপর্যায়ে দুপুর আড়াইটার দিকে উপনির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ওই দিন বিকেলে সম্পন্ন হওয়া কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার দাবিতে দুই উপজেলা সদরে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা।

আরও পড়ুন

এদিকে সম্পন্ন হওয়া কেন্দ্রগুলোর ফলাফল ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান। তিনি বলেন, উপনির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। স্থগিত ঘোষিত কেন্দ্রগুলোর পুনর্নির্বাচন হতে পারে। তবে জাপা মনোনীত গোলাম শহীদ উপনির্বাচন বন্ধ করায় নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আবার নির্বাচন হলে জাপা অংশ নেবে কি না, তা দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের বিষয়।

এ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী গত ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

আরও পড়ুন