রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, রোদে যেন পুড়ছে গা
রাজশাহী নগরের শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরে একটি নতুন গামছা মাথায় জড়িয়ে বসে ছিলেন রিকশাচালক মনোয়ার হোসেন। লম্বা হাতার একটি গেঞ্জিও দেখা গেল তাঁর গায়ে। জানালেন, রোদের তাপ শরীরের যেখানে পড়ছে, সেখানেই যেন পুড়ে যাচ্ছে। তাই এই প্রতিরোধব্যবস্থা। দুই দিন আগেও এত তাপ ছিল না। এখন রিকশার হ্যান্ডেলেও হাত রাখাও যাচ্ছে না।
আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন স্থানে রোদের তাপ থেকে বাঁচতে ছাতা, কেউ ক্যাপ (টুপি), এমনকি বাজারের ব্যাগও মাথায় দিয়ে কিছুটা স্বস্তি খুঁজতে দেখা গেছে। শ্রমজীবী মানুষেরা বারবার কাজের ফাঁকে ঘাম মুছছিলেন আর পানি পান করছিলেন। অসহনীয় তাপমাত্রায় বাইরে মানুষও কম দেখা গেছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে সর্বশেষ ৬ মে ৪৬ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। ওই সময় তাপমাত্রা কমে যায়। এরপর ৭ মে তাপমাত্রা বেড়ে হয় ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৮ মে এই তাপমাত্রা বেড়ে হয় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৯ মে তাপমাত্রা আরও ২ ডিগ্রি বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আজ বেলা ৩টার দিকে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক তারেক আজিজ বলেন, আজ রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এটি চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, যা অব্যাহত থাকতে পারে।
এই তাপপ্রবাহে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হিটস্ট্রোকজনিত কোনো রোগী সরাসরি ভর্তি না হলে কয়েক দিন ধরে ডায়রিয়া, জন্ডিস, আমাশয়–জাতীয় রোগে আক্রান্ত মানুষ কিছুটা বেড়েছে। হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কে বিশ্বাস বলেন, এই সময়ে রোদে বের হলে ছাতা রাখতে হবে। চেষ্টা করতে হবে ছায়াযুক্ত জায়গায় থাকতে। সঙ্গে সুতি কাপড় পরিধান করা উত্তম। ফুটপাত বা রাস্তার পাশের পানি, জুস বা শরবত পান করা থেকে বিরত থেকে সঙ্গে সুপেয় পানি রাখতে হবে। বেশি বেশি পানি পানের পাশাপাশি তেল-চর্বিযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় শিশু ও বয়স্করা। তাদের প্রতি বেশি যত্নশীল হতে হবে।
আজ বেলা আড়াইটার দিকে নগরের আলুপট্টি মোড় এলাকায় বালু টানার কাজ করছিলেন দিনমজুর রাহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, গত দুই দিনের রোদে কাহিল হয়ে গেছেন। বাসা থেকে লেবুপানি এনেছিলেন, তবে ফুরিয়ে গেছে। তাই শরীর ঠান্ডা রাখতে আখের রস পান করেন।
এমন রোদ সহ্য না করতে পেরে দুপুরের দিকে নগরের পদ্মা নদীর পাড়ে বসেছিলেন কয়েকজন। ছায়াঘেরা ওই জায়গাতে ঠান্ডা বাতাস মিলছে। পুঠিয়া উপজেলা থেকে শহরে কেনাকাটা করতে আসা জাহিদুল ইসলাম বসেছিলেন একটি গাছতলায়। বললেন, রোদের যে তাপ এই গরমে বাজার করা কঠিন। শরীর ঠান্ডা করে একটু বিকেল হলে বাজারে যাবেন।