বালু উত্তোলনের নামে চর কাটার অভিযোগ

স্থানীয় অন্তত ৯ জন বলেছেন, বালু উত্তোলনের জন্য নিশানা টাঙানো হলেও তাঁরা সীমানা মানছেন না। এতে গ্রাম ধসে যেতে পারে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মেঘনা নদীর চর থেকে খননযন্ত্রের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের নামে অপরিকল্পিতভাবে চর কেটে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বালুমহালের নির্ধারিত সীমানা না মেনে চরের ফসলি জমি কাটায় পাশের আরও কিছু জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

প্রতিদিন কয়েক লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙনের সৃষ্টি হয়ে চরের ফসলি জমিসহ তীরবর্তী লালপুর গ্রামের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। গত শুক্রবার বিকেলে অপরিকল্পিতভাবে মেঘনার লালপুর চরের কাছাকাছি এলাকায় বালু উত্তোলন বন্ধে লালপুরের লামাপাড়া ও পশ্চিমপাড়ার লোকজন বিক্ষোভ করেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ও নবীনগর উপজেলার দুটি বালুমহল বাংলা ১৪২৯ সনের পয়লা বৈশাখ থেকে এক বছরের ইজারা দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জেলা প্রশাসন। আশুগঞ্জ উপজেলার ২৫ একর আয়তনের চারলালপুর মৌজার বালুমহলের ইজারামূল্য ৩০ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৬ টাকা এবং নবীনগর উপজেলার ২০ একর আয়তনের কেদেরখোলা পশ্চিম বালুমহালের ইজারামূল্য ছিল ১১ লাখ ৮০ হাজার ৬৬৬ টাকা। মেসার্স মৌসুমী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা মোশারফ হোসেন ওরফে মিন্টু দুটি বালুমহালের ইজারা পান।

স্থানীয়রা জানান, চরলালপুর ও চরচারতলা মৌজায় ৩০ একর জায়গা বহু আগেই ভূমিহীনদের নাম বন্দোবস্ত দিয়েছে সরকার। চরলালপুর মৌজার চরের জমিতে স্থানীয় ভূমিহীন কৃষকেরা সারা বছর চাষাবাদ করেন। তাঁরা জানান, ইজারার টাকা জমা দিয়েই খরচ কমাতে ও অতিরিক্ত বালু তুলতে ইজারা সীমানা না মেনে মেঘনা নদীর লালপুরচর ঘেঁষে বালু উত্তোলন শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চরের ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ায় ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা বালু উত্তোলনে বাধা দিলেও কোনো কাজ হয়নি।

আশুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে ৫ ডিসেম্বর আশুগঞ্জ ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ার কবির হোসেন সঙ্গে নরসিংদীর রায়পুরা ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ারকে নিয়ে নদীর মাঝখানে দুই উপজেলার জায়গা মেপে সীমানা নির্ধারণ করেন।

লালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোরশেদ মিয়া বলেন, ‘বালু উত্তোলন করতে গিয়ে চরের ২০-২৫ শতক জমি কাটা হয়েছে। মাঝেমাঝে শুনি, যখন লোকজন থাকেন না, তাঁরা চরের কাছে ভিড়ে বালু তোলেন। এভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে পুরো লালপুর গ্রাম ধসে যেতে পারে।’

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, লালপুর চরের বিভিন্ন অংশে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। চরের পশ্চিম দিকের কিনারায় পা রাখতে মাটি ভেঙে পানিতে পড়ে যায়। পশ্চিম দিকের কিছু জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে টাঙানো একটি নিশানা চোখে পড়ে। চর থেকে ৩০০ ফুট দূরে বালু উত্তোলনের নির্দেশনা থাকলেও ১৬টি খননযন্ত্র দিয়ে চর থেকে ৩০০ ফুট ভেতরে বালু তোলা হচ্ছে। খননযন্ত্রগুলোর চারপাশে ২০-২৫টি বালু বহনকারী বাল্কহেড অবস্থান করতে দেখা গেছে। একটি বাল্কহেডে উঠে বালু উত্তোলনের ছবি তুললে ইজারাদারের লোকজন এসে বাধা দেন। জানতে চাইলে দায়িত্বে থাকা একজন বলেন, প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বালু উত্তোলন করা হয়। তবে তিনি নিজের নাম বলেননি।

কৃষকেরা অভিযোগ করে বলেন, একটি খননযন্ত্র দিয়ে গড়ে ৫০ হাজার ঘনফুট বালু তোলা হচ্ছে। সেই হিসাবে ১৬টি খননযন্ত্র দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৮ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

মৌসুমী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোশারফ হোসে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দিন ড্রেজারে তেল পুড়ি। কিন্তু বালু পাচ্ছি না। দুটি ড্রেজার নষ্ট হয়ে গেছে। আটটি ড্রেজার দিয়ে লালপুর বালুমহাল থেকে প্রতিদিন দেড় থেকে আড়াই লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।’ তিনি দাবি করেন, প্রশাসনের নির্ধারণ করা সীমানা থেকেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। চর কাটা হয়নি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, বুঝিয়ে দেওয়া সীমানার বাইরে থেকে বালু তোলা হলে সেটি ইজারার চুক্তির শর্তের লঙ্ঘন হবে। সে ক্ষেত্রে যত টাকা মূল্যেই ইজারা পাক না কেন, তা বাতিল করা হবে।