৫১ বছর বয়সে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছেন হাসিনা খাতুন

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ৫১ বছর বয়সে হাসিনা খাতুন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ালেখা করছেন
ছবি: প্রথম আলো

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মোছা. হাসিনা খাতুন ৪৭ বছর বয়সে ভর্তি হয়েছিলেন প্রথম শ্রেণিতে। এখন তাঁর বয়স ৫১ বছর। পড়ছেন পঞ্চম শ্রেণিতে। ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাসে হাজির হন, পরীক্ষাতেও ভালো করেন। বেঁচে থাকলে স্নাতক–স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়ার ইচ্ছা আছে তাঁর।

হাসিনা খাতুন কালিগঞ্জ উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের আবুল কাশেমের স্ত্রী। তাঁর দুই ছেলে–মেয়ে। সন্তানদের বিয়ে হয়েছে।

হাসিনা খাতুন বলেন, দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়া হয়নি তার। মাত্র ১২ বছর বয়সে ভাটপাড়া গ্রামের আবুল কাশেমের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। সংসার করতে গিয়ে তিনি পড়াশোনার গুরুত্ব বুঝেছেন। শিক্ষিত মানুষ কত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন, সেটা দেখে তাঁর পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। ছেলেমেয়ে বড় হওয়ার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন পড়াশোনা করবেন। সেই চিন্তা থেকে তিনি বাড়ির পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। ভর্তির অনুমতি পেয়ে ২০১৯ সালে তিনি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হন।

গত বুধবার ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, হাসিনা খাতুন পঞ্চম শ্রেণির ক্লাসে বসে আছেন। একজন শিক্ষিকা পড়া বলছেন, তিনি তাঁর সঙ্গে মিলিয়ে পড়া বলছিলেন।

শ্রেণিকক্ষে হাসিনা খাতুনের সঙ্গে বসে ছিল আফিয়া আফরিন ও লামিয়া জামান। তারা বলল, তাদের কেউ তাঁকে দাদি ডাকে, কেউ আবার বান্ধবী বলে। তাঁকে সহপাঠী হিসেবে পেয়ে তারা খুশি। তিনি মাঝেমধ্যে তাদের সঙ্গে গল্প করেন বলে তারা জানাল।

ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোমেনা খাতুন বলেন, এই বয়সে স্কুলে ভর্তি হয়ে নিয়মিত ছাত্রী হওয়া সত্যিই বিরল। হাসিনা খাতুনের লেখাপড়ার প্রতি খুবই আগ্রহ। প্রাইমারিতে ভর্তির একটা নীতিমালা আছে। আসলে তাঁর আগ্রহ দেখে মানবিক বিবেচনায় স্কুলে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর মাধ্যমিকে ভর্তির বিষয়েও তাঁরা সহযোগিতা করবেন বলে জানালেন।

এলাকার বাসিন্দা রেনু বেগম বলেন, ইচ্ছাশক্তি থাকলে সবই যে সম্ভব, তা দেখিয়ে দিলেন হাসিনা খাতুন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রাইমারিতে ৬ থেকে ১০ বছর বয়সীদের ভর্তি করা হয়। বয়স্কদের ভর্তি করার আলাদা কোনো নিয়মনীতি নেই। বয়স্ক কেউ ভর্তি হতে চাইলে তাঁদের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভর্তি করানো হয়। পড়াশোনার প্রতি হাসিনা খাতুনের আগ্রহ দেখে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে।