জরাজীর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান, ঝুঁকি

বরগুনার আমতলী মফিজ উদ্দিন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। গত বুধবার দুপুরেছবি: প্রথম আলো

ছাদে পলেস্তারা নেই। বেরিয়ে গেছে ভেতরের রড। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। নিচে বসে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। এমন চিত্র দেখা গেছে বরগুনার আমতলী মফিজ উদ্দীন বালিকা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এই বিদ্যালয়ে চার শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তারা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে।

প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম কবীর বলেন, বিদ্যালয়ের সব কটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বাধ্য হয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে। সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। এখানে নতুন ভবন প্রয়োজন। এই ভবন দিয়ে বর্ষার সময় পানি চুঁয়ে পড়ে।

সরেজমিন দেখা যায়, ছাদ ও খুঁটির পলেস্তারা খসে পড়েছে। ছাদে ঢালাইয়ের রড বেরিয়ে পড়েছে। ভবনটির বারান্দার অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে।

বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নওশীন বলে, ‘আমাদের বিদ্যালয় ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরায় আমরা আতঙ্কে থাকি। এতে আমরা ক্লাসে ভালোভাবে মনোযোগ দিতে পারি না। এর প্রভাব পড়ে পরীক্ষার ফলাফলে। ছাদ ও নিরাপত্তা পিলারের পলেস্তারা খসে পড়ছে। বর্ষার সময় ছাদ চুঁয়ে পানি পড়ে। বই–খাতা পানিতে ভিজে যায়।’

নবম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী সামিয়া ইয়াছমিন বলে, ‘আমাদের বিদ্যালয়টি খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। বিদ্যালয় ভবনগুলো যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে, এমন ভয় আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। অন্যদের বিদ্যালয় তো এমন নয়। আমাদের বিদ্যালয়টি মেরামত করা দরকার।’

পলেস্তারা খসে বিদ্যালয়ের বারান্দার ছাদের রড বেরিয়ে গেছে
ছবি: প্রথম আলো

বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, আমতলীর শিক্ষানুরাগী সাবেক এমএলএ মরহুম মফিজ উদ্দিন তালুকদার ১৯৬৫ সালে আমতলী শহরের এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৫ সালে চার কক্ষের একতলা মূল ভবনটি নির্মাণ করা হয়। ভবনটি নির্মাণের পর সংস্কার না করায় বর্তমানে ভবনের ছাদে ফাটল ধরেছে। বর্ষার সময় ছাদ চুঁয়ে পানি পড়ে। ১৯৮৭ সালে তিন কক্ষের আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হয়। বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে ২০০২ সালে পাঁচ কক্ষের একটি দোতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া দুটি ভবন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেখানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ভবনগুলো বর্তমানে তালাবদ্ধ।

সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে তাঁরা শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন। ক্লাস চলাকালে ছাদ থেকে পলেস্তারা ধসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। বিকল্প কোনো ভবন না থাকার কারণে বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান করাতে হয়। তাঁদের নতুন ভবন প্রয়োজন।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তাঁদের জানা নেই। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চিঠি দিয়ে বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ঘোষণার জন্য আবেদন করলে তাঁরা সরেজমিন যাবেন। জেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত কমিটির সভায় আলোচনা করে তা নিলামে তোলা হবে। তবে যদি মেরামতের যোগ্য হয়, তা হলে সংসদ সদস্যের কাছ থেকে বরাদ্দ নিয়ে তা মেরামত করা হবে।