গঙ্গাচড়ায় মাটির বাঁধ ভেঙে বসতভিটা ও আবাদি জমি হুমকির মুখে
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীর ভাঙন আরও তীব্র হচ্ছে। ভাঙন কবলিত ইচলি এলাকায় আজ বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে মাটির তৈরি একটি বাঁধের প্রায় ২০০ ফুট এলাকা ভেঙে গেছে। বাঁধের পাশে ঘরবাড়ি যাদের রয়েছে তাঁরা ঘর ভেঙে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের ইচলি এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীভাঙনে আতঙ্কিত হয়ে বাড়িঘর ভেঙে কেউ কেউ দূরে পাকা সড়কের পাশে সরকারি জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন।
লক্ষ্মীটারি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ও স্থানীয় জনগণ জানায়, নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে ২০১৭ সালে শেখ হাসিনা সেতুর পাশ থেকে বাগেরহাট পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার এ মাটির বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। উপজেলার বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধটি নির্মাণ করেন। পানির স্রোতে এই বাঁধের ইচলি এলাকায় প্রায় ২০০ ফুট এলাকাজুড়ে ভেঙে পড়েছে। এর ফলে পানি প্রবেশ করছে এলাকায়। বাঁধের পাশে বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা শরবানু বেগমের (৫০) স্বামী নেই। ছেলে ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তাঁর দুটি টিনের ঘর নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে। তিনি বিলাপ করে বলছেন, ‘মোর কায়ও (কেউ) নাই। মুই এলা কি করও। এই ঘর সরবার (সরিয়ে) না পারলে নদীত ভাঙি যাইবে।’
স্থানীয় লোকজন বলেন, নদীর পানি রাতে বাড়লেও সকাল থেকে কমতে শুরু করেছে। তবে নদীর ভাঙন তীব্র হয়েছে। ফলে উঠতি আমনখেত পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। বাড়িঘর নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন পশ্চিম ইচলি গ্রামের কৃষক আবুল কালাম। তিনি তাঁর টিনের ঘর খুলে এবং আসবাবপত্র বাঁধের শুকনা স্থানে তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘নদীর কোনো ঠিক নাই। কখন কোন পাকে ভাঙে, তা বলা যায় না। কয়েক বছর থাকি এই এলাকাত (ইচলি) আছনো। এবার বাঁধ ভাঙছে। তাই আর থাকা হইল না।’
এদিকে ভাঙন ছাড়াও নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে উঠতি আমনখেত। বাবলু মিয়া প্রায় এক একর জমিতে আমন চাষাবাদ করেছেন। তিনি বলেন, গেল পাঁচবার নদীর পানি বাড়লেও ফসলের খেত পানি তলিয়ে যায়নি। এবার বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে আমনখেত তলিয়ে গেলে। তবে তাঁর আশা পানি নেমে যাবে। এলাকার আরও অনেকের ধানখেত তলিয়ে গেছে।
লক্ষ্মীটারি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদী বলেন, প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ মাটির বাঁধটি স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করা হয়েছিল। সেটি এবার ভেঙে গেল। নতুন করে বাঁধের ভাঙা অংশ ঠিক করতে হবে।
আবদুল্লাহ আল হাদী আরও বলেন, তিস্তা নদীর উত্তর পশ্চিমে শংকরদহ এলাকা থেকে ইচলি হয়ে পাশের কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা এলাকা পর্যন্ত একটি বেড়ি বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছিল এলাকাবাসী। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গুরুত্ব না দেওয়ায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নতুন নতুন এলাকা ভাঙন দেখা দেয়।
পাউবো রংপুর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। এ নিয়ে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।