গাজীপুরে শ্রমিকদের বাসাভাড়া না বাড়াতে বাড়ির মালিকদের পুলিশের অনুরোধ

শ্রমিকদের বাসা ভাড়া না বাড়াতে বাড়ির মালিকদের সঙ্গে শিল্প পুলিশের বৈঠক। মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুর শিল্প পুলিশের টঙ্গী কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ আর আন্দোলন–সংগ্রামের পর বিভিন্ন গ্রেডে পোশাকশ্রমিকদের বেতন কিছুটা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। এই সুযোগে শ্রমিকদের বাসাভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন কিছু বাড়ির মালিক। গোয়েন্দা পুলিশের এমন তথ্যের ভিত্তিতে গাজীপুর মহানগরে বাড়ির মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে গাজীপুর শিল্প পুলিশ। সভায় তারা কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই শ্রমিকদের বাসাভাড়া না বাড়াতে বাড়ির মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানান।

মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে শিল্প পুলিশের টঙ্গীর দত্তপাড়ার কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইমরান আহম্মেদ। সভায় যোগ দেন টঙ্গীর দত্তপাড়া, হিমারদীঘি, লেদু মোল্লা রোড, হাসান লেন, বনমালা সড়ক ও আশপাশের এলাকার প্রায় ১০০ জন বাড়ির মালিক এবং শিল্প পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী। ধাপে ধাপে গাজীপুরের সব এলাকার বাড়ির মালিকের সঙ্গে এ ধরনের বৈঠকের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ।

মতবিনিময় সভায় বলা হয়, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গত ২৩ অক্টোবর গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় আন্দোলন শুরু করেন শ্রমিকেরা। এরপর সে আন্দোলন ধাপে ধাপে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায়। শ্রমিক-পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ, বিক্ষোভ ও আন্দোলনের পর সম্প্রতি বিভিন্ন গ্রেডে বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ খবরে কিছু বাড়ির মালিক, বিশেষ করে শ্রমিক–অধ্যুষিত এলাকায় শ্রমিকদের বাসাভাড়া বাড়ানোর পাঁয়তারা শুরু করেছেন। বিষয়টি শিল্প পুলিশের নজরে এসেছে। এরপর শ্রমিকদের কথা ভেবে স্থানীয় বাড়ির মালিকদের সঙ্গে বসার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।

শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহম্মেদের ভাষ্য, শ্রমিকদের বেতন এমনিতেই কম। কষ্টের জীবন। তার ওপর বেতন বৃদ্ধির কারণে যদি বাসাভাড়া বেড়ে যায়, তবে বেতন বৃদ্ধির সুফল মিলবে না। শ্রমিকেরা কষ্টেই থেকে যাবেন। তাঁদের মধ্যে আবারও অসন্তোষ দেখা দেবে। তিনি বলেন, ‘এসব চিন্তা করেই আমরা স্থানীয় কিছু বাড়ির মালিকের সঙ্গে বসেছিলাম। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি যেন হুটহাট বা কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই শ্রমিকদের বাসাভাড়া না বাড়ান। বাড়ির মালিকেরা আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। তাঁরাও কথা দিয়েছেন, বাসাভাড়া বাড়াবেন না। এটা আমাদের প্রথম সভা। ধাপে ধাপে গাজীপুরের সব এলাকার বাড়ির মালিকের সঙ্গে বসা হবে। আমরা চাই, প্রতিটি বাড়ির মালিক, শ্রমিক ও শিল্প পুলিশের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠুক।’

পোশকশ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের জন্য গত এপ্রিলে নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে সরকার। ২২ অক্টোবর বোর্ডের সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব দেন। মালিকপক্ষ এ প্রস্তাবে সায় না দিলে ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা বিক্ষোভে নামেন। প্রথমে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা আশুলিয়া ও মিরপুরে ছড়িয়ে পড়ে। এ আন্দোলনে গাজীপুরের চার পোশাকশ্রমিক নিহত হন। এর মধ্যে সরকার পোশাকশ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করে, যা বর্তমানের চেয়ে এই মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। নতুন মজুরিকাঠামোতে সাতটি গ্রেডের বদলে পাঁচটি গ্রেড থাকবে। আগামী ১ ডিসেম্বর নতুন মজুরি কার্যকর হবে এবং জানুয়ারি মাসে নতুন কাঠামো অনুযায়ী মজুরি পাবেন শ্রমিকেরা।