এখনো হাতের মেহেদির রং শুকায়নি, লাশ হয়ে ফিরলেন নববধূ

লাশপ্রতীকী ছবি

মুঠোফোনে সৌদিপ্রবাসীর সঙ্গে বিয়ে হয় তাছলিমা আক্তারের। চার দিন আগে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বামীর সংসারে যান। হাতে লাগানো মেহেদির রং এখনো শুকায়নি। এর মধ্যে ওই নবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। স্বামীর বাড়ি থেকে তাঁর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সৌদিপ্রবাসী স্বামী নৃশংসভাবে তাঁকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের। ঘটনার পর থেকে স্বামী পলাতক।

মঙ্গলবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের হীরাপুর মধ্যপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ওই নববধূর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। নিহত তাছলিমা আক্তার সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের বাসুদেব গ্রামের মৃত আবদুর রাজ্জাকের ছোট মেয়ে এবং আখাউড়ার হীরাপুর মধ্যপাড়ার সৌদিপ্রবাসী আবদুল হামিদের স্ত্রী ছিলেন।

পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাত-আট মাস আগে মুঠোফোনে সৌদিপ্রবাসী আবদুল হামিদের সঙ্গে তাছলিমার বিয়ে হয়। সম্প্রতি ছুটিতে দেশে আসেন হামিদ। গত শুক্রবার দুই পরিবারের লোকজন হামিদ ও তাছলিমার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। ওই দিন নববধূ তাছলিমাকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। আজ দুপুরে হঠাৎ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাছলিমার গলায়, পেটে ও বাঁ হাতে ছুরিকাঘাত করেন হামিদ। এতে ঘটনাস্থলে তাছলিমা মারা যান। আশপাশের লোকজন হামিদের বাড়িতে হইচই শুনে সেখানে গিয়ে নববধূর রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান।

এদিকে খবর পেয়ে নিহতের ভাই আবদুল কুদ্দুছ বোনের শ্বশুরবাড়িতে যান। বোনের রক্তাক্ত লাশ দেখে ভগ্নিপতিকে আটকের চেষ্টা করেন তিনি। এ সময় হামিদ তাঁকেও ছুরিকাঘাত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। আবদুল কুদ্দুস সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদেশে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে হামিদের সঙ্গে ছোট বোনের বিয়ে হয়। গত শুক্রবার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করি দুই পরিবার। বোনকে জীবিত স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে কোনো ঝামেলা হয়েছে কি না, জানি না। বোনের লাশ দেখে ভগ্নিপতিকে আটকের চেষ্টা করলে সে ছুরি মেরে পালিয়ে যায়। আমি আমার বোনের হত্যার বিচার চাই।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হামিদ দীর্ঘ ছয় বছর বিদেশে ছিলেন। ১৫-২০ দিন আগে ছুটিতে দেশে আসেন। তবে হামিদ এলাকার কারও সঙ্গে তেমন মেলামেশা করতেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তেমন সক্রিয় ছিলেন না। হীরাপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. হেলাল মিয়া বলেন, ‘দুপুরের নামাজ পড়ে হইচই শুনে দৌড়ে এসে শুনি, হামিদ তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করেছে।’

ঘটনার পর থেকে পলাতক আবদুল হামিদ। অভিযোগের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আখাউড়া থানার ওসি মো. নুরে আলম বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। পাশের বাড়ির এক নারী জানিয়েছেন, সকালে স্বাভাবিক দেখেছেন। দুপুরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে হাতে থাকা ছুরি দিয়ে তাছলিমার পেট, গলা ও বাঁ হাতে একাধিক আঘাত করেন তাঁর স্বামী। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। খবর পেয়ে নিহতের ভাই ঘটনাস্থলে গিয়ে ভগ্নিপতিকে আটকের চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি তাঁকেও ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান। পুলিশ তাঁকে আটকের চেষ্টা করে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি রক্তাক্ত ছুরি উদ্ধার করেছে।