রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় চুরির অভিযোগে নির্যাতন চালিয়ে ভ্যানচালক ওমর ফারুককে (৩৯) হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর বাবা মোসলেম সরদার বাদী হয়ে বাগমারা থানায় এ মামলা করেন।
মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন দেউলা গ্রামের রেজাউল করিম (৪৭), বিপ্লব ওরফে ভুট্ট ড্রাইভার (৩৫), রহিদুল ইসলাম (৪৫), হাবিবুর রহমান (৫৫), মাঝিগ্রামের আবদুল মতিন (৪০), দানগাছি গ্রামের মুকুল হোসেন (মুরগি মুকুল) (৪৪), জুয়েল রানা (ভাংড়ি জুয়েল) (৩৫), দরগামাড়িয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম (৪০), ভবানীগঞ্জের আসাদুল ইসলাম (৩৬), আবদুস সালাম (৪৮), মোজাম্মেল হক (৪২) ও আবদুল হান্নান (৩৮)।
আসামিদের মধ্যে তিনজনকে ২৩ ডিসেম্বর দুপুরে আটক করে পুলিশ। মুকুল হোসেনকে থানায় এনে ছেড়ে দেওয়া হলেও অন্য দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়। বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ভবানীগঞ্জ সিএনজিস্ট্যান্ডে তাঁর ছেলে ওমর ফারুক অটোভ্যান রেখে প্রস্রাব করতে যান। ফিরে এলে সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি রেজাউল করিম ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন তাঁকে আটক করেন। তাঁদের নির্দেশে সমিতির সদস্যরা ওমর ফারুককে লোহার রড দিয়ে পেটাতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর ওমর ফারুককে একটি প্রাচীরের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে উভয় হাত ও পায়ে হাতুড়ি দিয়ে কয়েকটি লোহার পেরেক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় ওমর ফারুককে মারপিট করতে থাকেন। এর একপর্যায়ে পানি পান করতে চাইলে নদীতে নিয়ে ওমর ফারুককে বিবস্ত্র করে চোবানো হয়। একপর্যায়ে অন্যরা গিয়ে ওমর ফারুকের পায়ুপথে শুকনা মরিচের গুঁড়া ঢেলে দেন।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, নির্যাতনের একপর্যায়ে ওমর ফারুকের অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। পরে ওমর ফারুকের কাছ থেকে গাঁজা উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে আসামিরা বাগমারা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞাকে জানান। তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ওমর ফারুককে ১০০ টাকা অর্থদণ্ড ও ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। এরপর ওমর ফারুককে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাজশাহী কারাগারে পাঠায় পুলিশ। সেখানে অসুস্থ হলে পরদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ ডিসেম্বর ওমর ফারুকের মৃত্যু হয়।
বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর ওমর ফারুককে হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। সেখানে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক সাকলাইন হোসেন জানান, ‘ওমর ফারুকের শরীরের বিভিন্ন স্থান সামান্য ফোলা ও জখম ছিল। তবে গুরুতর কিছু ছিল না।’
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা বলেন, ‘ওমর ফারুকের কাছে গাঁজা পাওয়া যাওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাঁকে ৭ দিনের কারাদণ্ড ও ১০০ টাকার অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। তবে এর আগে তাঁকে মারধর করা হয়েছিল কি না, সেটি আমি জানি না। সাজা দেওয়ার সময় তিনি সামান্য অসুস্থ ছিলেন। তবে তাঁর শরীর রক্তাক্ত ছিল না।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু জাহিদ শেখ প্রথম আলোকে জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আগে আটক আসামি মুরগি মুকুলকে ছেড়ে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন যেহেতু আসামি হয়েছে, তাঁকে আবার ধরা হবে।’