চরফ্যাশনে দুই ভাইকে খুনের মামলায় তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় জোড়া খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে চরফ্যাশনে অবস্থিত অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. শওকত হোসাইন এ রায় দেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল ভোলা জেলার চরফ্যাশন থানার আসলামপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুন্দরী খালের পশ্চিম পাশে মো. জামাল উদ্দীন ভুইয়ার নির্জন বাগানে দুটি মুণ্ডুহীন আগুনে ঝলসানো দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর কিছুদিন পর একই গ্রামের মুহিবুল্লার বাড়ির টয়লেটের ট্যাংকের ভেতর থেকে নিহতদের মাথা উদ্ধার করা হয়।
পরে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়, লাশ দুটি চরফ্যাশন পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আপন দুই ভাই দুলাল চন্দ্র শীল ও তপন চন্দ্র শীলের। এ ঘটনায় পুলিশ সাতজনকে আটক করেছে। তদন্তে ঘটনার সঙ্গে চারজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। চারজনই খুনের সঙ্গে জড়িত বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দেন।
দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া শেষে আদালত আসামিদের মধ্যে বিল্লাল ফরাজী (৩৭), সালাউদ্দিন বয়াতী (৩০) ও শরীফুল ইসলাম মুন্সীকে (৩২) সরাসরি খুনের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাঁদের মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন। এ ছাড়া আসামি আবু মাঝিকে (৫৯) ছয় মাস ও আবুল কাশেমকে (২৬) পাঁচ মাসের সাজা দেওয়া হয়। তাঁরা জেলহাজতে থেকে সাজা ভোগ করায় তাঁদের খালাস দেওয়া হয়েছে।
মামলার তদন্তে জানা যায়, নিহত তপন চন্দ্র শীল ও তাঁর ভাই দুলাল চন্দ্র শীল স্থায়ীভাবে ভারতে বসবাসের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। এ জন্য তাঁরা চরফ্যাশনের জমিজমা গোপনে বিক্রি করে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। পাশের গ্রামের বাসিন্দা (মামলার প্রধান আসামি) মো. বেলাল নিহত দুজনের কাছে মোট ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ জমি ২০ লাখ টাকায় কেনার চুক্তি করেন। অগ্রিম বাবদ ওই দুই ভাইকে ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে বায়না চুক্তি এবং আংশিক জমির দখল বুঝে নেন।
ইতিমধ্যে তপন ও দুলাল ভারতে চলে যান। পরে বেলাল বাকি টাকা পরিশোধ করতে বিলম্ব করলে তপন চন্দ্র শীল ও দুলাল চন্দ্র শীল বাকি টাকা নেওয়ার জন্য ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশে এলেও তাঁরা আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। কারণ, তাঁদের শরিকদের সঙ্গে একাধিক মামলা চলমান ছিল।
মামলা থেকে আরও জানা যায়, তপন ও দুলাল বাংলাদেশে এসে চট্টগ্রামে বেলালের ভায়রা ভাই (দ্বিতীয় আসামি) সালাউদ্দিনের ভাড়া বাসায় ওঠেন। ইতিমধ্যে করোনা মহামারির লকডাউন শুরু হলে ভিকটিমরা আর ভারতেও ফিরে যেতে পারেননি। ইতিমধ্যে আসামিরা টাকা দেবেন বলে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ওই দুই ভাইয়ের কাছ থেকে সব জমি লিখে রেজিস্ট্রি করে নেন এবং টাকা না দিয়ে জমির মালিকদের খুনের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামিরা ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল তপন ও দুলালকে খুন করে তাঁদের মরদেহ পুড়িয়ে দেন এবং মুণ্ডু দুটি টয়লেটের ভেতর ফেলে দেন।