নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষে আহত ১৫, ককটেল বিস্ফোরণ

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয় সড়কে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর সড়ক থেকে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। শনিবার বিকেলে বাইপাস সড়কের ছাতারপাইয়া চৌরাস্তায়
ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে সোনাইমুড়ী সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে।

পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। দুই পক্ষকে দুই দিকে ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।

সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আহাদ উল্যাহ ওরফে হেলাল, যুবদলের কর্মী মো. আনোয়ার হোসেন, জিসান আহমেদ ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মো. মিলন। তাঁদের স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছাত্রলীগের দুই কর্মী আহত হয়ে ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে হাসপাতালের চিকিৎসক তাঁদের নাম জানাতে পারেননি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা তিনটায় সোনাইমুড়ী সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। দুপুরে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা মিছিল সহকারে উপজেলা সদরে আসতে থাকেন।

সূত্র জানায়, বিএনপির নেতা-কর্মীদের সমাবেশে যোগদান ঠেকাতে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পাহারা বসান স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা যানবাহন তল্লাশি করে বিএনপি কর্মীদের সমাবেশে আসতে বাধা দেন এবং বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের মারধর করেন। কিন্তু বাধা পেরিয়ে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বিএনপির কয়েক হাজার নেতা-কর্মী সোনাইমুড়ীর ছাতারপাইয়া রাস্তার মাথায় জড়ো হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল পৌনে চারটার দিকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল সহকারে সোনাইমুড়ী বাজারের দিকে আসার পথে সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয় সড়কে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাধার মুখে পড়েন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সেখানে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করেন। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এ সময় পুলিশ দুই পক্ষকে দুই দিকে ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে কর্মসূচি শেষ করেন। ফেরার পথেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় হামলার শিকার হন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

সমাবেশে অংশ নেওয়া জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক মাহমুদ হাসান ওরফে শাকিল প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার সব কটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এরপরও বাধা পেরিয়ে তাঁরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল বের করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিনা কারণে মিছিল লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন।

মাহমুদ হাসান আরও বলেন, দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় বিএনপির প্রতিরোধের মুখে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পিছু হটেন। পরে তাঁরা সমাবেশ করেছেন। তিনি জানান, আওয়ামী লীগের হামলায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত ১০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহফুজুল হক ওরফে ভিপি বাহার বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে বাজারের দিকে ঢোকার সময় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কর্মীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এ সময় দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তাঁদের ইটের আঘাতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কমপক্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সমাবেশ করেছে। তবে তার আগে দুই পক্ষের মধ্যে একটু পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। শহরে পুলিশ টহলে আছে।