রাবিতে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা ‘অনৈতিক ও অযৌক্তিক’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য বরাদ্দকৃত পোষ্য কোটার বিষয়টিকে ‘অনৈতিক ও অযৌক্তিক’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে। এ কোটার যৌক্তিকতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক সংলাপে বক্তারা এ মন্তব্য করেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনের সামনে আমবাগানে এ সংলাপের আয়োজন করে ছাত্র ফেডারেশন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্রসংগঠন ও শিক্ষার্থীরা মতামত দেন।
সংলাপে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক মাহমুদ জামান কাদেরী, গবেষক ও লেখক মাহবুব সিদ্দিকী, রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আবদুল মজিদ, সদস্যসচিব আমানুল্লাহ খান, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি মেহেদী হাসান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক রিদম শাহরিয়ার, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সদস্য আলিফ প্রমুখ। সংলাপ সঞ্চালনা করেন ছাত্র ফেডারেশনের সদস্য আশিক উল্লাহ। সভাপতিত্ব করেন ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটায় নেওয়া হয়েছে ৬৭ শিক্ষার্থীকে। পোষ্য কোটায় পাস নম্বর ন্যূনতম ৪০ হলেও এ বছর ৩০ নম্বর পেলেই ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া খেলোয়াড় কোটায় কয়েক শিক্ষার্থীকে ন্যূনতম ৩০ নম্বরের নিচেও ভর্তি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে।
সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হয়ে গেছে। এ সময়ে এসেও যদি কোটা প্রয়োজন হয়, সেটা দুঃখজনক। একান্তভাবে প্রয়োজন হতে পারে পিছিয়ে পড়া ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ছেলেমেয়েরা কোন যুক্তিতে কোটা পান? এটা সব সময় অযৌক্তিক ও অনৈতিক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এটা বাতিল করতে হবে।
অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম বলেন, পোষ্য কোটার বিষয়টি নৈতিকতার মানদণ্ডে দেখলে সেটা তাঁরা সমর্থন করতে পারেন না। কারণ, এ কোটা রাখার মধ্য দিয়ে একটা সুবিধাভোগী গোষ্ঠী তৈরি হয়। এই ছাত্ররাই পরবর্তী সময়ে নানা অনৈতিকতার সঙ্গে যুক্ত হয়। এ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে তাঁরাই শিক্ষকের আসনে বসে যান। ফলে আক্ষরিক অর্থে দেখা যায়, এতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিম্নগামী হচ্ছে। সব শিক্ষকের ছেলেমেয়েই যে এ কোটা ব্যবহার করেন, আসলে তা নয়। অনেকেই আছেন, যাঁরা এটা নিতে চান না। কারণ, এতে আত্মমর্যাদার বিষয় থাকে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে পোষ্য কোটার এই অসামঞ্জস্যতার কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে পোষ্য কোটা বাতিল সময়ের দাবি।
বাংলাদেশে বর্তমানে চাকরি, নিয়োগ কিংবা ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা আর প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন গবেষক ও লেখক মাহবুব সিদ্দিকী। তাঁর মতে, কোটা অযৌক্তিক এবং একই সঙ্গে অনৈতিক। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে আসতে হবে মেধা দিয়ে। তবে ব্যত্যয় আছে, যাঁরা শারীরিকভাবে অক্ষম, এ রকম মানুষদের ক্ষেত্রে বিবেচনা করতে হবে। তবে সেটাও মেধার ভিত্তিতে নিতে হবে। মেধাহীন দিয়ে এ রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না।
কোটাব্যবস্থাকে অন্যায়, অন্যায্য মন্তব্য করে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক মাহমুদ জামান কাদেরী বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে কোটা বিষয়টি খুবই বিস্ময়কর। দেশ এগিয়েছে, উন্নয়নের মহাসড়কে নাকি দেশ। তারপরও কেন কোটা থাকবে? এ কোটা থাকতে পারে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় যাঁরা চাকরি করেন, তাঁরা কীভাবে এ সুবিধা পান। যাঁরা পোষ্য কোটায় ভর্তি হচ্ছেন, তাঁদের যোগ্যতা কী! এর স্থায়ী সমাধানের জন্য রাষ্ট্র ও সংবিধানের সংস্কার করতে হবে।