নেত্রকোনায় হাওরাঞ্চলে দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ

ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। গত শনিবার খালিয়াজুরির নয়াবন্ধ হাওরেছবি: প্রথম আলো

প্রচণ্ড দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ। তবে মে মাসের শুরুতে দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের অনেক জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কায় নেত্রকোনায় হাওরসহ নিম্নাঞ্চলে দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও কৃষি বিভাগ কৃষকদের দ্রুত খেত থেকে পাকা ধান কেটে বাড়িতে আনার পরামর্শ দিচ্ছে। অবশ্য কৃষি বিভাগ বলছে, এরই মধ্যে হাওরের অধিকাংশ খেতের ধান কাটা হয়ে গেছে।

এ সম্পর্কে আজ সোমবার সকালে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩ মে থেকে দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের অনেক জায়গায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। তাই বৃষ্টির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে হাওরে বোরো ধান দ্রুত কাটার জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। যেসব ধান ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হয়েছে, তা দ্রুত কেটে নিরাপদ ও শুকনা স্থানে রাখার জন্য বলা হচ্ছে।’ গতকাল রোববার পর্যন্ত ৭০ শতাংশ খেতের ধান কাটা হয়েছে বলে জানান তিনি।

একই কথা বলেছেন পাউবোর নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক সারওয়ার জাহান। তিনি বলেন, ‘৩ মে থেকে নেত্রকোনা এবং এর উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে মাঝারি থেকে প্রবল বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির প্রভাবে জেলার নদ-নদী, হাওরসহ নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়বে। এ জন্য হাওরের ধান কেটে দ্রুত ঘরে তোলার জন্য বলা হচ্ছে। এ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচার করা হচ্ছে।’

গতকাল রোববার পর্যন্ত ৭০ শতাংশ খেতের ধান কাটা হয়েছে। গত শনিবার খালিয়াজুরির পায়রাবন্ধ হাওরে
ছবি: প্রথম আলো

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনায় এ বছর ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাওরাঞ্চলে রয়েছে ৪১ হাজার ৭০ হেক্টর। বেশির ভাগ ধান ব্রি-২৮ ও ব্রি-৮৮-সহ উচ্চফলনশীল হাইব্রিড জাতের। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০ শতাংশ খেতের ধান কাটা হয়েছে। শ্রমিকের পাশাপাশি সাত শতাধিক কম্বাইন হার্ভেস্টারে ধান কাটা চলছে।

গত শনিবার কয়েকটি হাওর ঘুরে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ধান কাটা হয়েছে মদনের উচিতপুর হাওর, ফতেপুর হাওর, খালিয়াজুরির কীর্তনখোলা হাওর, লক্ষ্মীপুর হাওর, চুনাই হাওর, কাটকাইলের কান্দা, বৈলং হাওর, লেপসাই হাওর, চৈতারা হাওর, আশাখালী হাওর, পায়া হাওর ও দৈলং সাপমারা হাওরে।

খালিয়াজুরির পুরানহাটি গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকায় শ্রমিকসংকট থাকলেও মেশিনের সাহায্যে এখন দ্রুত ধান কাটা যাচ্ছে। শতাধিক শ্রমিক এক দিনে যে ধান কাটেন, একটি কম্বাইন হার্ভেস্টারে এক দিনেই কাটা যায়। এখন সব ধানই পেকে গেছে। আজ সকাল থেকে মাইকে দ্রুত ধান কাটার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। পানি আসার আশঙ্কায় আমরা ধান কেটে ফেলছি।’

মদন উপজেলার উচিতপুরের কৃষক আরিফুল মিয়া বলেন, উচিতপুর হাওরে প্রায় ৬৮ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। এ বছর প্রচণ্ড রোদ থাকায় নিরাপদে ধান কাটা ও শুকানো যাচ্ছে। গবাদিপশুর খড়ও শুকিয়ে জমা করা হচ্ছে।
ওই উপজেলার বাগজান গ্রামের কৃষক ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘প্রতিদিন প্রচণ্ড রোদ হচ্ছে। অনেকে গরমে সইতে না পেরে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করছেন। কিন্তু আমরা বৃষ্টি চাই না। এখন বৃষ্টি হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।’

মোহনগঞ্জের ডিঙ্গাপোঁতা হাওরপারের গ্রাম খুরশিমুল। ওই গ্রামের সবচেয়ে ধনী কৃষক সলিল চক্রবর্তী বলেন, ‘হাওরের ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হইছে। রইদ থাকায় ধীরে ধীরে ধান কাটা হচ্ছে। অহন শুনতাছি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। বাকি খেতের ধান দ্রুত কেটে ফেলব। হাওরে অহন বৃষ্টি অইলে মরণ ছাড়া গতি নাই।’