জামিন পেলেন চিন্ময়ের আইনজীবীসহ ৬৫ জন

চট্টগ্রাম আদালতে আজ আইনজীবীদের জামিনের আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ কারণে আদালত প্রাঙ্গণে ছিল বাড়তি নিরাপত্তা। আজ দুপুরে তোলাসৌরভ দাশ।

চট্টগ্রামে আইনজীবী, পুলিশ ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ এবং গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগের পৃথক দুই মামলায় জামিন পেয়েছেন ৬৫ আইনজীবী। এর মধ্যে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর আইনজীবী শুভাশিস শর্মাও রয়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে অতিরিক্ত চিফ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন আইনজীবীরা। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।

গত বছরের ২৬ নভেম্বর খুন হওয়া আইনজীবী সাইফুল ইসলামের ভাই জানে আলম বাদী হয়ে ১১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলেন। এর মধ্যে ৭০ জন আইনজীবী রয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলার আরেক মামলায় কিছু আইনজীবীকে আসামি করা হয়।

সরকারি কৌঁসুলি রিয়াদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দুই মামলায় ৬৫ আইনজীবী আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। জামিন মঞ্জুর হওয়া আইনজীবীদের মধ্যে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবীও রয়েছেন।

এদিকে আইনজীবীদের জামিন আবেদনের শুনানিকে কেন্দ্র করে আজ সকাল থেকে আদালতপাড়ায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা আদালত প্রাঙ্গণে সতর্ক পাহারায় ছিলেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আইনজীবীদের জামিন আবেদন শুনানিকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে আদালতপাড়ায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

চট্টগ্রাম আদালতে আজ আইনজীবীদের জামিনের আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ কারণে আদালত প্রাঙ্গণে ছিল বাড়তি নিরাপত্তা। আজ দুপুরে তোলা
সৌরভ দাশ।

জামিন মঞ্জুর হওয়া মামলার আসামিদের অন্যতম চট্টগ্রাম আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মহানগর পূজা পরিষদের সাবেক সভাপতি চন্দন কুমার তালুকদার, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী নিতাই প্রসাদ ঘোষ, মহানগর পূজা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী নিখিল কুমার নাথ, আইনজীবী চন্দন দাশ, রুবেল পাল, সুমন আচার্য, আশীর্বাদ কুমার বিশ্বাস প্রমুখ।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ২৬ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হয়। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে বাধা দেন তাঁর অনুসারীরা। তাঁরা প্রিজন ভ্যান আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় আসামিরা আইনজীবী, বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা চালান। হামলায় ২০ থেকে ৩০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। একইভাবে পুলিশের করা মামলায় তাঁদের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়।

জামিন পাওয়ার কথা স্বীকার করে আইনজীবী নিখিল কুমার নাথ আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাইফুল আমাদের ভাই। আমরা তাঁর হত্যাকারীদের বিচার চাই। সাইফুল হত্যাকাণ্ডে আমরা সব আইনজীবী এক। কেউ যাতে আমাদের আইনজীবীদের মধ্যে সম্প্রীতিতে ফাটল ধরানোর সুযোগ না পায়।’

২৬ নভেম্বর চিন্ময় দাসের জামিনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আইনজীবী সাইফুল মারা যান। এ হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধা এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তার হন ৪০ জন। তাঁদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ১০ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন। সাইফুল হত্যার ১০ আসামির মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য সম্প্রতি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।