পটুয়াখালীর বাউফলে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেবের ওপর হামলার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাঁর ছেলে মো. মাহমুদ হাসান। এতে তিনি অভিযোগ করেন, সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের নেতৃত্বে ও হুকুমে সন্ত্রাসী বাহিনী তাঁর বাবার ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার বগা বন্দরের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করেন মাহমুদ হাসান। মাহমুদ বগা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাহমুদ হাসান অভিযোগ করেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে তাঁর বাবা আবদুল মোতালেব হাজারো নেতা-কর্মী নিয়ে বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে আনন্দমিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন। র্যালিটি সোয়া ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে পৌঁছালে আ স ম ফিরোজের নেতৃত্বে ও হুকুমে সন্ত্রাসী বাহিনী তাঁর বাবার ওপর পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে তাঁর বাবার ডান পা ভেঙে যায়, কোপে ফুসফুসের ব্যাপক ক্ষতি হয় ও ডান হাতের তৃতীয় আঙুল কেটে চামড়ার সঙ্গে ঝুলে থাকে। তিনি এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
মাহমুদ এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গতকাল বাউফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনটি পক্ষ একই সময়ে কর্মসূচি দেয়। এর মধ্যে সভাপতি আ স ম ফিরোজ ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব—এই দুটি পক্ষের কর্মসূচি উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে (জনতা ভবন) এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পক্ষের কর্মসূচি বাউফল প্রেসক্লাব সড়কের পাশে উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেকাংশের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
এ কর্মসূচিকে ঘিরে গতকাল সকাল নয়টা থেকে আওয়ামী লীগের তিনটি পক্ষের নেতা-কর্মীরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে জড়ো হন। বাউফল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউল হক ওরফে জুয়েলের পক্ষের নেতা-কর্মীরা বাউফল সরকারি কলেজ মাঠে, সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের পক্ষের নেতা-কর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের (জনতা ভবন) সামনে এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদারের পক্ষের নেতা-কর্মীরা বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জড়ো হন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবদুল মোতালেবের নেতৃত্বে গতকাল বেলা ১১টার দিকে বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে মিছিলটি বের হয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের (জনতা ভবন) দিকে যাচ্ছিল। সোয়া ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে পৌঁছালে সংঘর্ষ এড়াতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল আমিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাঁদের বাধা দেয়। তখন পুলিশ ও আবদুল মোতালেব হাওলাদারের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। অপর পাশেই লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছিলেন আ স ম ফিরোজের সমর্থকেরা। তখন আ স ম ফিরোজ ছাদখোলা একটি গাড়িতে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
একপর্যায়ে দুই পক্ষের সমর্থকেরা দলীয় ও নিজ নিজ নেতার নামে স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর আবদুল মোতালেবের সমর্থকেরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে দলীয় কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। তখন আবদুল মোতালেবের কর্মী-সমর্থকেরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশসহ অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন। একপর্যায়ে আবদুল মোতালেবের ওপর হামলা চালান সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের ধারালো অস্ত্রধারী সমর্থকেরা। তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করা হয়। থামাতে গিয়ে আহত হন অন্তত ১০ জন। আবদুল মোতালেব বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন বলে তাঁর মেয়ে মোসা. রেশমা জানিয়েছেন।
পুলিশের কাজে বাধা ও পুলিশ আহত হওয়ার অভিযোগে গতকাল রাতে অজ্ঞাতনামা ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন বাউফল থানার উপপরিদর্শক মো. মনির হোসেন।