অরক্ষিত পুকুর আর অসচেতনতাই দায়ী

কুতুবদিয়ায় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধের উপায় খুঁজতে প্রথম বারের মতো আয়োজন করা হয় সেমিনার। গতকাল বিকেলেছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়ার অন্যতম সমস্যা পুকুরে ডুবে শিশুমৃত্যু। প্রায় সময় পুকুর, খাল, ডোবা, বালতির পানিতে পড়ে শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। এসব মৃত্যুর পেছনে মূল কারণ ঘেরা-বেড়াছাড়া অরক্ষিত পুকুর এবং অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব।

গতকাল বৃহস্পতিবার কুতুবদিয়ায় আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। শিশুমৃত্যু রোধ করতে গতকাল বিকেলে কুতুবদিয়ার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসন, এনজিও প্রতিনিধি, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডেশন।

সেমিনারে ভূমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, অরক্ষিত পুকুরগুলোতে দ্রুত বেড়া তৈরি, শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, সচেতনতা বৃদ্ধিতে মায়েদের নিয়ে উঠান বৈঠক, শিশুদের দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে ওয়ার্ড পর্যায়ে রেসকিউ টিম গঠন ও দ্রুত যোগাযোগের জন্য হটলাইন অ্যাপস চালুর তাগিদ তুলে ধরা হয়। বক্তারা বলেন, দ্বীপের ছয়টি ইউনিয়নের ১২ হাজারের বেশি পুকুর রয়েছে। ৯৫ শতাংশ পুকুর অরক্ষিত-ঘেরা বেড়া নেই। অনেকটা খেলতে খেলতেই শিশুরা পুকুরে ডুবে মারা যাচ্ছে।  

‘অবহেলিত কুতুবদিয়া: পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু ও আমাদের করণীয়’ শিরোনামে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ  উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী রেজাউল করিম চৌধুরী। দ্বীপের বড়ঘোপ এলাকার হোটেল সমুদ্র বিলাসের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী।

কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়ার ঘরে ঘরে এ রকম অরক্ষিত পুকুর
ছবি : প্রথম আলো

সেমিনারে উপজেলা ছয়টি ইউনিয়নের শতাধিক ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা  পিকেএসএফের ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ, পরিবেশবিষয়ক সংগঠন ধরিত্রীর কক্সবাজার জেলা সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী।

উপজেলা প্রশাসন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ বছরে পুকুরে ডুবে মারা গেছে অন্তত ২৯৪ জন। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ৮০ জন, ২০১৯ সালে ৩৮ জন, ২০২০ সালে ২৫ জন, ২০২১ সালে ৪৭ জন, ২০২২ সালে ৫৭ জন, ২০২৩ সালে ৪৭ জন। সর্বশেষ গত বুধবার দুপুরে বড়ঘোপ ইউনিয়নের ছৈয়দপাড়ার মো. ফারুকের আড়াই বছর বয়সী সায়েদের মৃত্যু হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার মোস্তফা কামাল বলেন, ২০২৩ সালে উপজেলাতে পুকুরে ডুবে মারা গেছে ৪৩টি শিশু। অধিকাংশ শিশু হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছে।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা আক্তার বলেন, পুরুষেরা সারা দিন ঘরের বাইরে কাজকর্মে ব্যস্ত থাকেন। মায়েদের ঘরের কাজ সামলানোর পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপড়া-সবকিছু দেখভাল করতে হয়। এর মধ্যে পুকুরে ডুবে শিশুর মৃত্যু হলে মা-দের দায়ী করা হয়। শিশুর মৃত্যু রোধ করতে হলে অরক্ষিত পুকুর ভরাট এবং পুকুরের সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে।