বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ভর্তির খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দুই ভাই
পবিত্র রায় ও শুভ রায় দুই ভাই। দিদা, মাসহ পাঁচ সদস্যের সংসার তাঁদের দিনমজুর বাবার একার আয়ে চলে। অভাবের সংসারে যেখানে দুইবেলা ভালো করে খেয়ে বাঁচা কষ্টকর, সেখানে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া দুরূহ। তবে দমে যাননি অদম্য দুই ভাই। লেখাপড়ার পাশাপাশি টিউশনি করে পবিত্র এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। শুভ এবার তারাগঞ্জ ও/এ সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
তবে এমন সুখবরেও হাসি নেই পবিত্র ও শুভর পরিবারে। কারণ, দুই সন্তানের ভর্তি ও পড়ার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁদের মা–বাবা।
তারাগঞ্জ সদর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বাহাগিলি বাড়াইপাড়া গ্রামে পবিত্র ও শুভদের বাড়ি। তাঁদের বাবা ডালিম রায় দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরিতে তারাগঞ্জের একটি দোকানে কর্মচারীর কাজ করেন। মা সোনা রানী গৃহিণী। পবিত্র রায় ২০২০ সালে তারাগঞ্জ ও/এ সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে নীলফামারী সরকারি কলেজে ভর্তি হন। ওই কলেজ থেকে ২০২২ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পান। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় তাঁর মেধাক্রম হয় ১৩০৩। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
পবিত্রদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা টিনের দোচালা দুটি ঘর। টিনের চালে জং ধরেছে, সেই ফুটো দিয়ে যাতে বৃষ্টির পানি ভেতরে ঢুকতে না পারে, সে জন্য চালের ওপর পলিথিন মুড়ে দেওয়া হয়েছে। ঘরের বাঁশের খুঁটিগুলো বেশ নড়বড়ে, বেড়া ভেঙে ফুটো হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়।
বাড়িতে গিয়ে দুই ভাইয়ের খোঁজ করতে তাঁদের মা সোনা রানী বলেন, পাশের বাড়ির কৃষক অর্জুন রায়ের আমন খেতে রাসায়নিক সার ছিটাতে গেছে দুই ছেলে। দুই ছেলের ভর্তি, বই কিনে দিতেই নাকি ৩৫ হাজার টাকা লাগবে। লেখাপড়ার খরচ তো আছেই। খরচ কীভাবে জোগাবেন, সেটা নিয়ে বাবা ডালিম রায়ও চিন্তায় আছেন।
খবর পেয়ে বাড়িতে আসেন দুই ভাই। পবিত্র রায় বলেন, ‘ভর্তির টাকা কোথায় পাব? এরপরই বা কী হবে! ভর্তি হওয়া নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে।’ আর ছোট ভাই শুভ বলে, ‘আমার স্বপ্ন, লেখাপড়া শেষ করে ইঞ্জিনিয়ার হব। বড় ভাইয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির টাকাই জোগাড় হচ্ছে না। আমার স্বপ্ন মনে হয় স্বপ্নই থেকে যাবে!’
তারাগঞ্জ ও/এ সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, ডালিম রায় তারাগঞ্জে কাজ করায় তাঁর পূর্বপরিচিত। তাঁর দুই ছেলেই এই বিদ্যালয়ের ছাত্র। এই দুই অদম্য মেধাবীর জন্য কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি এগিয়ে এলে তাঁদের স্বপ্ন পূরণ হবে।