‘বিতর্কিতদের’ দিয়ে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগের কমিটি

২ সেপ্টেম্বর রাতে এ কমিটি অনুমোদিত হয়। এর মধ্য দিয়ে প্রায় ১৮ বছর পর সংগঠনটি সিলেটে কোনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেল।

সিলেট জেলার মানচিত্র

সিলেট জেলা এবং মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের চার বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর রাতে এ কমিটি অনুমোদিত হয়। এর মধ্য দিয়ে প্রায় ১৮ বছর পর সংগঠনটি সিলেটে কোনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেল।

তবে কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া অনেকে ‘বিতর্কিত’ ও ‘অযোগ্য’ বলে চিহ্নিত করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা থেকে শুরু করে যুবলীগের পদবঞ্চিত ও কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া নেতা-কর্মীরা। কমিটি ঘোষণার পর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অন্তত ২০ জন নেতা-কর্মী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নতুন কমিটির সমালোচনা করে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। 

ফেসবুক ঘেঁটে দেখা গেছে, যুবলীগের কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া কিছু ‘বিতর্কিত’, ‘অযোগ্য’ ও ‘অনুপ্রবেশকারী’ নেতাদের চিহ্নিত করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মীদের অনেকে ফেসবুকে নাম প্রকাশ করছেন। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে বসবাস করছেন, এমন দুজন প্রবাসীর পাশাপাশি র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীকেও কমিটিতে রাখা হয়েছে বলে তাঁরা অভিযোগ এনেছেন। এ ছাড়া ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে কখনো জড়িত না থেকেও ভুল পদবি দেখিয়ে অনেককে কমিটিতে স্থান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

এ বিষয়ে মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শামীম আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, নানা পর্যায়ে অনেক যাচাই-বাছাই শেষে যোগ্য, দক্ষ ও সাংগঠনিক ব্যক্তিদেরই কমিটিতে রাখা হয়েছে। যে বা যাঁরা ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির সমালোচনা করছেন, তাঁরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে কমিটিকে সমালোচিত করতেই এমনটা করছেন। 

এদিকে যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল এ দুটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন। মহানগরে ১৩১ সদস্যবিশিষ্ট এবং জেলায় ১০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদিত হয়েছে। তবে কিছু কিছু পদ ফাঁকা রাখা হয়েছে। পরে সেসব পূর্ণ করা হবে। 

কোনো প্রবাসী বা মাদক ব্যবসায়ীকে কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হয়নি। কিছু জামায়াত ঘরানার মানুষ ভুয়া অভিযোগ তুলছেন। সব ত্যাগী নেতা কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন।
আলম খান, সভাপতি, সিলেট মহানগর যুবলীগ 

একই সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২৭ জুলাই মহানগর এবং ২৯ জুলাই জেলা যুবলীগের সম্মেলন হয়। সেখানে সরাসরি ভোটে জেলায় শামীম আহমদ সভাপতি ও মোহাম্মদ শামীম আহমদ সাধারণ সম্পাদক এবং মহানগরে আলম খান সভাপতি ও মুশফিক জায়গীরদার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘেঁটে দেখা গেছে, মহানগরে ৪৯টি পদ ফাঁকা আছে। এর মধ্যে ৫টি সহসভাপতি, ৪টি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ৩টি সাংগঠনিক সম্পাদক, নানা ধরনের ১১টি উপসম্পাদক, ৭টি সহসম্পাদক এবং ১৯টি সদস্য পদ ফাঁকা রয়েছে। এ ছাড়া জেলা কমিটিতে ৭টি পদ ফাঁকা আছে। এর মধ্যে ১টি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ১টি সাংগঠনিক সম্পাদক, ১টি সহসম্পাদক ও ৪টি সদস্য পদ রয়েছে।

এদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই ফেসবুকে সমালোচনায় মুখর হন সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক নেতা-কর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, জেলা যুবলীগে ঠাঁই পাওয়া একজন সদস্য দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এবং মহানগর যুবলীগের সহসম্পাদক হিসেবে ঠাঁই পাওয়া একজন অনেক দিন ধরে যুক্তরাজ্যে থাকেন। জেলা কমিটিতে মহিলাবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে স্থান পাওয়া বিউটি বেগম ওরফে তামান্নাকে দেখানো হয়েছে সিলেট মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। তবে তিনি কখনো এমন দায়িত্বে ছিলেন না। 

বিউটি ছাড়াও দুটি কমিটিতে ১০ থেকে ১৫ জন রয়েছেন, যাঁদের ভুল রাজনৈতিক পদবি দেখিয়ে কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে অনেক যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতাদের পাশ কাটিয়ে ‘অযোগ্য’ ও ‘বিতর্কিতরা’ কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছেন। মহানগর কমিটিতে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া চিহ্নিত এক মাদকসেবীও ঠাঁই পেয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। 

অভিযোগের বিষয়ে মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান বলেন, কোনো প্রবাসী বা মাদক ব্যবসায়ীকে কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হয়নি। কিছু জামায়াত ঘরানার মানুষ ভুয়া অভিযোগ তুলছেন। তাঁদের কাজই হচ্ছে আঙুল দেওয়া। আসলে সব ত্যাগী নেতা কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন। 

অন্যদিকে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শামীম আহমদ বলেন, ব্যক্তিগত জেলাস থেকে কেউ কেউ সমালোচনা করছেন। তবে কমিটি যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতাদের নিয়েই হয়েছে। 

যুবলীগের কমিটিতে পদপ্রত্যাশী ছিলেন সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর আহমদ। সিলেট মদনমোহন কলেজ ছাত্রলীগের এই সাবেক সহসভাপতি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। কিন্তু আমাকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া বেশির ভাগই অযোগ্য।’