অতি বিপন্ন বনছাগলের দেখা পাওয়া গেল মিরসরাইয়ের সংরক্ষিত বনে

বারৈয়ারঢালা জাতীয় উদ্যানের পাহাড়ি এলাকায় গবেষকদের স্থাপন করা বিশেষ ক্যামেরায় সম্প্রতি ধরা পড়েছে বনছাগলের বিচরণের এমন ছবি
ছবি: গবেষক কামরুল হাসানের সৌজন্যে

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বারৈয়ারঢালা জাতীয় উদ্যানে অতি বিপন্ন বনছাগলের দেখা মিলেছে। বন্য প্রাণী শুমারির কাজে স্থাপন করা বিশেষ ক্যামেরায় এই বনে বনছাগলের টিকে থাকার প্রমাণ পেয়েছেন একদল গবেষক।

সুমাত্রান সেরো নামে পরিচিত বনছাগল বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্তির পথে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এই প্রাণীকে সংকটাপন্ন লাল তালিকাভুক্ত করেছে। গবেষকদের ধারণা ছিল যে পার্বত্য চট্টগ্রামের মাতামুহুরী নদীর তীরে অভয়ারণ্যে অল্প কিছু বনছাগল এখনো টিকে আছে। তবে মিরসরাইয়ে এই প্রাণীর টিকে থাকার প্রমাণ মেলার পর গবেষকেরা বলছেন, উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়ায় বনছাগল আবারও বনে ফিরছে।

বারৈয়ারঢালা অভয়ারণ্যের সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তারা বলেন, হরেক রকম পাখি, বন্য প্রাণী ও নানান বৈচিত্র্যময় গাছপালা থাকায় ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ের ওয়াহেদপুর, খৈয়াছড়া ও সীতাকুণ্ড উপজেলার বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের ২ হাজার ৯৩৩ দশমিক ৬১ হেক্টর সংরক্ষিত পাহাড়ি বনভূমি নিয়ে বারৈয়ারঢালা জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠা করা হয়। উদ্যানটিতে সংরক্ষণের জন্য বন বিভাগের উদ্যোগে ‘সুফল’ প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে দুই বছর মেয়াদি একটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। এ বছরের মে মাসে গবেষণা শেষ হয়েছে। এই গবেষণায় বনের বিভিন্ন স্থানে ৪৮টি বিশেষ ধরনের ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। এসব ক্যামেরার অন্তত ২২টিতে বনছাগলের বিচরণের ছবি ধরা পড়েছে।

বারৈয়ারঢালা জাতীয় উদ্যানের পাহাড়ি এলাকায় বনছাগলের বিচরণ
ছবি: গবেষক কামরুল হাসানের সৌজন্যে

বারৈয়ারঢালা জাতীয় উদ্যানে বন বিভাগের সুফল প্রকল্পের আওতায় বন্য প্রাণীর ওপর যে গবেষণা হয়েছে, তার প্রধান ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান। জানতে চাইলে প্রথম আলোকে এই গবেষক বলেন, ‘বারৈয়ারঢালা জাতীয় উদ্যানে বন্য প্রাণীর ওপর গবেষণার মাঠপর্যায়ের কাজ শেষ হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে বন বিভাগকে এখনো প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি। এ গবেষণায় আমাদের স্থাপন করা ক্যামেরায় বিভিন্ন বন্য প্রাণীর ছবির সঙ্গে বনছাগলের আশাব্যঞ্জক উপস্থিতি দেখেছি। সংগৃহীত এসব ছবি বিন্যাস করে এখন ছাগলের সংখ্যা বের করার কাজ চলছে।’

বনছাগলের মতো অতি বিপন্ন প্রাণীর সংখ্যা বাড়ার প্রমাণ পেয়ে গবেষকেরা উচ্ছ্বসিত। তবে এই এলাকায় শিকারিদের উপস্থিতি তাঁদের শঙ্কিত করেছে। মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, বারৈয়াঢালা বনে বন্দুক হাতে শিকারির ছবিও ধরা পড়েছে আমাদের ক্যামেরায়। এ ধরনের ঘটনা আমাদের আতঙ্কিত করেছে। পাচারকারী ও অবৈধ শিকারিদের বনে প্রবেশ বন্ধ না করলে বন্য প্রাণী টিকবে না।’

পাহাড়ে এখন মাঝেমধ্যেই বনছাগলের দেখা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বনজীবী মো. সেলিম
ছবি: প্রথম আলো

এলাকার অনেক বাসিন্দা নিয়মিত বারৈয়াঢালা অভয়ারণ্যে যাতায়াত করেন। এদের কয়েকজন বনছাগল দেখার কথা জানিয়েছেন প্রথম আলোকে। মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের পূর্ব পোলমোগরা গ্রামের বাসিন্দা মো. সেলিম ২০ বছর ধরে বাঁশ-কাঠ কাটতে বনে যান। জানতে চাইলে প্রথম আলোকে সেলিম বলেন, ‘পাহাড়ে এখন মাঝেমধ্যেই বনছাগলের দেখা পাই। কয়েক মাস আগেও বাচ্চাসহ একটি বনছাগল চোখে পড়েছে আমার।’

বারৈয়ারঢালা জাতীয় উদ্যান সহব্যবস্থাপনা নির্বাহী কমিটির সভাপতি মো. সরোয়ার উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের বন, বন্য প্রাণী ও পাখির ওপর নজর রাখছেন। তিনি বলেন, ‘এ এলাকায় যে বনছাগল আছে, এটি বলে একসময় বন কর্মকর্তাদের আমি বিশ্বাস করাতে পারিনি। কিন্তু স্থানীয় লোকজন প্রায়ই মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া বিটের পাথুরে খাড়া পাহাড়গুলোয় বনছাগল দেখার কথা বলত। এবার তো গবেষকদের ক্যামেরায় ছবি ধরা পড়ল। এটি আমাদের জন্য অনেক বড় সুখবর।’