৮ শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন

ওই পাঁচ গ্রামের তিন শতাধিক ঘরবাড়ি ও বৌলাইগঞ্জ বাজারের ১০-১২টি দোকানঘর এখন নদভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে।

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় ভাঙনের হুমকিতে বৌলাইগঞ্জ বাজার। গতকাল তোলা
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের শরীয়তপুর, শান্তিপুর, ইসলামপুর, বাবুপুর ও নূরপুর গ্রামের আট শতাধিক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও ওই ইউনিয়নের বৌলাইগঞ্জ বাজারের ৪০ থেকে ৪৫টি দোকানঘর স্থানীয় বৌলাই নদের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ওই পাঁচ গ্রামের তিন শতাধিক ঘরবাড়ি ও বৌলাইগঞ্জ বাজারের ১০-১২টি দোকানঘর এখন নদের ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে।

দ্রুত এই ভাঙনের কবল থেকে রক্ষায় টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী।

সরেজমিনে গিয়ে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৌলাই নদটি সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের শরীয়তপুর গ্রামের আধা কিলোমিটার উত্তর পাশ থেকে শুরু হয়ে পাশের জামালগঞ্জ উপজেলার গজারিয়ার মোহনা পর্যস্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার বিস্তৃত। নদটির পূর্ব পাশে জামলাগঞ্জের ফেনারবাক ইউনিয়ন আর পশ্চিম পাশে সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়ন। নদটিতে সারা বছরই পানি থাকে। নদের পশ্চিম পাড় ভেঙে পূর্ব পাড়ে জেগে উঠেছে নতুন নতুন চর। নদটির তীর ঘেঁষে শরীয়তপুর, শান্তিপুর, ইসলামপুর, বাবুপুর, নূরপুর গ্রাম ও বৌলাইগঞ্জ বাজারটি রয়েছে। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এই নদের ভাঙন শুরু হয়েছে। তবে পাঁচ বছর ধরে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। কিন্তু এই ভাঙন রোধে কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নেয়নি।

বৌলাইগঞ্জ বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি রফিকুল বারী চৌধুরী বলেন, নদের ভাঙনে ইতিমধ্যে বৌলাইগঞ্জ বাজারের ৪০ থেকে ৪৫টি দোকানঘর বিলীন হয়ে গেছে। ১০-১২টি দোকানঘর ও বাজারের উত্তর পাশে থাকা বাবুপুর গ্রামসহ ওই গ্রামের জামে মসজিদটিও ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।

নূরপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘নদের ভাঙনে এ পর্যন্ত আমাকে চারবার নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরি করতে হয়েছে। নদে ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ায় দুই-তিন বছর ধরে আমাদের বাড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচটি দরিদ্র পরিবার বসবাস করছে। এ ছাড়া আমাদের গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ও একটি মসজিদ এই নদের গর্ভে বিলীন হয়েছে।’

একই গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আবদুল ওয়াহাব বলেন, ‘এত বছরের ধইরা নদের ভাঙন শুরু অইলেও গ্রামগুলা রক্ষার লাইগা কারও কুনু নজর নাইগা। এক সপ্তাহের মধ্যেই আমার বসতঘরডাও এই নদীডা গিইল্লা খাইব।’

স্থানীয় পল্লি চিকিৎসক জসীম উদ্দিন বলেন, নদের ভাঙনে এখানকার পাঁচটি গ্রামের অনেক পরিবারই আজ নিঃস্ব হয়ে গেছে। শরীয়তপুর গ্রামের বিধবা নারী হনুফা আক্তার বলেন, ‘দুই বছর আগে নদীডা আমরার ঘরবাড়ি গিইল্লা খাইছে। অহন ছেলে ও ছেলের বউরে লইয়া অন্যের বাড়ি আশ্রয় নিছি।’

শরীয়তপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ফরহাদ আহমেদ বলেন, ‘ছোটবেলা এই নদে কতবার সাঁতার কেটেছি, তার হিসাব নেই। তবে নদটির চিত্র এখন অনেকটাই বদলে গেছে। এখন এগুলো নদের গর্ভে বিলীন হয়ে নদ বাড়ির কাছাকাছি চলে এসে ভাঙন শুরু করেছে। আমাদের পুরো গ্রামটিই এখন নদের ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে। এই নদে দুই কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ দেওয়া হলে পাঁচটি গ্রাম ও একটি বাজার রক্ষা পাবে।’

 সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউপির চেয়ারম্যান নাসরিন সুলতানা বলেন, ‘নদের ভাঙনে আমাদের ইউনিয়নের আট শতাধিক ঘরবাড়ি, দুই শতাধিক একর ফসলি জমি, মসজিদ, বিদ্যালয় ও দোকানঘর নদে বিলীন হয়ে গেছে। দুই শতাধিক পরিবার ভিটেমাটিহীন অবস্থায় অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে। এখনো তিন শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে ওই পাঁচ গ্রাম ও একটি বাজার নদের গর্ভে বিলীন হয়ে পড়বে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অলিদুজ্জামান বলেন, নদের ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হবে।

 পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, ‘আমি সপ্তাহখানেক আগে নদের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো ও বাজারটি পরিদর্শন করে এসেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’