যশোর ও নড়াইলের সীমান্তবর্তী একটি বিলের প্রায় এক হাজার বিঘা জমি সাত বছর ধরে অনাবাদি অবস্থায় পড়ে আছে। পানিনিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ‘বোরো ধানের ভান্ডার’ হিসেবে পরিচিত বিলটির কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি জমেছে। এর ফলে ফসল ফলাতে না পেরে চরম বিপাকে পড়েছেন সেখানকার কৃষকেরা।
বিল কাঠুরিয়া নামের বিলটির বুক চিরে পূর্ব থেকে পশ্চিমে চলে গেছে কাঠুরিয়া খাল। প্রায় ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটির পূর্ব পাশে একটি সেতু রয়েছে। সেতুটি নির্মাণের সময় খালে আড়াআড়ি দেওয়া হয়েছিল মাটির বাঁধ। নির্মাণকাজ শেষের সাত বছরেও বাঁধটি সরেনি। এতে খালে জোয়ার–ভাটা বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে খাল দিয়ে বিলের পানিনিষ্কাশনও বন্ধ। এ কারণে সাত বছর ধরে বিলের প্রায় এক হাজার বিঘা জমিতে কোনো ধান চাষ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।
খালের দক্ষিণ পাশে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জামদিয়া ইউনিয়ন এবং উত্তর পাশে নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর ও শেখহাটী ইউনিয়ন। বিলের উত্তর দিকে নড়াইল সদর উপজেলার বেনাহাটী এলাকা এবং পূর্বে উপজেলার মালিয়াট-বাকলী বিল। বিলের দক্ষিণে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বাকড়ী এলাকা এবং পশ্চিমে উপজেলার ঘোড়ানাছ বিল।
গত শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বিলের দক্ষিণ দিকে কিছুটা উঁচু। সেখানে লম্বা কয়েকটি পুকুর কেটে মাছ চাষ করা হচ্ছে। বিলের বেশির ভাগ অংশ ভরে আছে পানিতে। প্রায় পুরো বিল ছেয়ে আছে কচুরিপানা, বিভিন্ন আগাছা ও হোগলাগাছে। বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে কাঠুরিয়া খালের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে নড়াইল সদর উপজেলার শেখহাটী-তুলারামপুর সড়ক। উপজেলার হাতিয়াড়া এলাকায় খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে হাতিয়াড়া সেতু। সেতুর মুখে খাল অনেকটা উঁচু হয়ে আছে। সেতু থেকে বিলের দিকে ছোট নালার মতো হয়ে চলে গেছে খালটি।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কাঠুরিয়া খালের প্রায় চার কিলোমিটার কাঠুরিয়া বিলের মধ্যে পড়েছে। আগে খালে জোয়ার–ভাটা হতো। খাল দিয়ে জোয়ারের সঙ্গে আসা পলি বিলে ছড়িয়ে পড়ত, জমি উর্বর হতো। খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হওয়ায় শীতের শেষে বিলটি শুকিয়ে যেত। তখন বোরো ধানের চাষ হতো। প্রচুর ধান হতো। বছরের অন্য সময় পানি থাকায় বিলে প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যেত।
বিলে এক বিঘা এক কাঠা (৪৮ শতকে বিঘা) জমি আছে বাঘারপাড়া উপজেলার বাকড়ী গ্রামের কৃষক অজয় কুমার বিশ্বাসের (৪১)। তিনি বলেন, হাতিয়াড়ায় সেতু নির্মাণ করার সময় খালে আড়াআড়ি মাটির বাঁধ দেওয়া হয়। বাঁধের কারণে খাল দিয়ে আসা জোয়ার–ভাটা বন্ধ হয়ে যায়। খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় বিলের পানিনিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে বিলে কোনো ধান হচ্ছে না। খুব কষ্টে আছেন তাঁরা।
যোগাযোগ করা হলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, বিল কাঠুরিয়ায় তাঁদের ১৫০ থেকে ২০০ বিঘার মতো জমি জলাবদ্ধ আছে। সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি দেখে জেলা সমন্বয় সভায় আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
যশোর ও নড়াইল জেলা মিলে বিলে প্রায় এক হাজার বিঘা জমি রয়েছে বলে জানালেন বাকড়ী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক উজ্জ্বল বিশ্বাস (৬১)। তিনি বলেন, সেতুর কাজ শেষে ঠিকাদার বাঁধ অপসারণ করেননি। এতে সেতুর সামনে খালের মুখ উঁচু হয়ে যায়। সেই থেকে খালে জোয়ার–ভাটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিল জলাবদ্ধ হয়ে আছে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ১ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ টাকা ব্যয়ে হাতিয়াড়ায় ২০ মিটার দীর্ঘ গার্ডার সেতু নির্মাণ করে। ওই সময় খালে দেওয়া বাঁধটি অপসারণ করা হয়নি। এই সুযোগে কয়েকজন মাছের ঘেরের মালিক হাতিয়াড়া শ্মশানের উত্তর পাশে খালের মধ্যে মাটি ফেলায় সেতুর মুখে খালটি বিল থেকে উঁচু হয়ে গেছে।