কুড়িগ্রামে উদ্ধারের দ্বিগুণ বই শিক্ষা কার্যালয়ের গুদাম থেকে গায়েব হয়েছিল

পাচারকালে জব্দ করা মাধ্যমিকের বিনা মূল্যে বিতরণের বই। বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুর সদর থানা প্রাঙ্গণেছবি: প্রথম আলো

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার গুদাম থেকে সাড়ে ১৭ হাজার সরকারি বিনা মূল্যের বই গায়েব হয়েছে। তবে এসব বই পাচারের সময় শেরপুরের পুলিশ ৯ হাজার বই উদ্ধার করেছে। বাকি বইয়ের হদিস এখনো পাওয়া যায়নি। উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার ভোরে শেরপুর সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের ধাতিয়াপাড়া গ্রাম থেকে সদর থানার পুলিশ ট্রাকসহ ৯ হাজার ৬৭০টি বই জব্দ করে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে পুলিশ মাহিদুল ইসলাম (৩২) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে। মাহিদুলের বাড়ি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাহিদুল এসব বই ঢাকায় পাচারের কাজ করছিলেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। পরে ওই দিন বিকেলে রৌমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের পিয়ন জামাল হোসেনকে (৪৬) আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে রৌমারী উপজেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে শিক্ষা বিভাগও তদন্ত কমিটি গঠন করে।

দুই কমিটির তদন্তে রৌমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের গুদামে বই ঘাটতির প্রমাণ মিলেছে। তদন্তে দেখা গেছে, শেরপুর পুলিশের হাতে বই উদ্ধার হয়েছে ৯ হাজার ৬৭০টি কিন্তু গুদাম থেকে বই হারিয়েছে ১৭ হাজার ৫৩৩টি। যা উদ্ধার হওয়া বইয়ের দ্বিগুণ। শুধু তা–ই নয়, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বলছে রৌমারী শিক্ষা কার্যালয়ের গুদামে আরও কিছু বাড়তি বইও পাওয়া গেছে। এসব বই গুদামে কীভাবে এসেছে সেসবের কোনো তথ্য গুদামে দায়িত্বে থাকা উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার ও অফিস সহায়কের কাছে নেই।

শিক্ষা বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদনের একটি কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, গোডাউনে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই ঘাটতি আছে ১৭ হাজার ৫৩৩টি। এর মধ্যে শেরপুর থানা-পুলিশ ৯ হাজার ৬৭০টি বই উদ্ধার করেছে। অবশিষ্ট সাত হাজার ৮৬৩টি বইয়ের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ওই গোডাউনে ৯ম ও ১০ম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ, বাংলাদেশের ইতিহাস ও সভ্যতা, পৌরনীতি ও নাগরিকতা, ইসলাম শিক্ষা এবং হিন্দুধর্ম শিক্ষা বিষয়ের মোট আট হাজার ৫৬১টি বই মজুত আছে। এসব বইয়ের কোনো চালান কপি পাওয়া যায়নি।

তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ের গুদামে রাখা বই সংরক্ষণ ও বিতরণের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. মুকতার হোসেন, অফিস সহকারী আখেরুল ইসলাম এবং পিয়ন জামাল উদ্দিন। প্রাথমিক তদন্তে তাদের প্রত্যেকের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মিলেছে।

মুকতার হোসেন বলেন, ‘বই গোডাউন থেকে হারিয়ে যাওয়ার দুই দিন আগে আমি অ্যাকসিডেন্ট করে রংপুর মেডিকেল এ ভর্তি হয়েছি। তাই সেখানে আমার অনুপস্থিতিতে কী হয়েছে আমি স্টেশনে না যাওয়া পর্যন্ত বলতে পারছি না।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, রৌমারীর গুদাম থেকে বই বিক্রির ঘটনায় পুলিশ তদন্ত করছে। একাডেমিক সুপারভাইজার এবং অফিস সহকারী দায়িত্বে অবহেলায় বই পাচারের ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল কুমার হালদার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বইগুলো বিক্রির উদ্দেশে পাচারের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। আরও তথ্যের জন্য কমিটি দুই দিন সময় চেয়েছে। এ ঘটনায় কর্মকর্তা পর্যায়ের কেউ জড়িত আছে কি না সেটা জানতে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান ইউএনও।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন