রাজবাড়ীতে কৃষক লীগের সম্মেলনে আ.লীগের সভাপতি-সম্পাদকের সমর্থকদের হাতাহাতি
রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়ন কৃষক লীগের সম্মেলনে পছন্দের প্রার্থীকে সভাপতি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান ওরফে শাহিনুর ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর রবের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে চন্দনীর রাজিয়া বেগম উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
আবদুর রব একই সঙ্গে চন্দনী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। হাতাহাতির পর তিনি সম্মেলনস্থলের পাশে ইউপি কার্যালয়ে চলে যান। পরে সেখানে মিজানুরের অনুসারীরা তাঁর ওপর হামলা করেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। যদিও মিজানুর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিকেল চারটায় রাজিয়া বেগম উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ইউনিয়ন কৃষক লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনের প্রথম পর্বে আলোচনা সভা ও সন্ধ্যার পর দ্বিতীয় পর্বে ছিল কাউন্সিল অধিবেশন। সম্মেলনের প্রধান অতিথি ছিলেন রাজবাড়ী-১ (সদর ও গোয়ালন্দ) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাজী কেরামত আলী। প্রধান বক্তা ছিলেন কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী হক। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি হেদায়েত আলী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রমজান আলী খান, জেলা পরিষদ সদস্য আজম আলী মণ্ডল, চন্দনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর রব প্রমুখ।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন অতিথিরা। সম্মেলন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ইউনয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রব ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম। প্রথমে সাধারণ সম্পাদকের পদ ঘোষণা করা হয়। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় সবুজ মোল্লা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কিন্তু সভাপতি পদে আবদুস সালাম, আবু দাউদ শেখ ও আলমগীর হোসেন নামে তিনজন প্রার্থী ছিলেন।
আবু দাউদ শেখ নামে একজনকে সমর্থন করেন ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রব। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান সভাপতি হিসেবে আলমগীর হোসেনকে সমর্থন করেন। উভয়ই নিজ নিজ প্রার্থীকে সভাপতি হিসেবে নাম ঘোষণা দেওয়ার জন্য সংসদ সদস্যকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে সংসদ সদস্য নাম ঘোষণা না করেই চলে আসেন।
এরপর আবদুর রবের ওপর চড়াও হন মিজানুর রহমানের সমর্থকেরা। রবের সমর্থকেরা তা প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে ধাক্কাধাক্কি হয়। এরপর রব তাঁর কিছু অনুসারী নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে চলে আসেন। সেখানে তিন দফায় উপস্থিত হয় মিজানুর রহমানের সমর্থকেরা রবের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন।
আবদুর রব বলেন, ‘সম্মেলনে আমি সভাপতি পদে দাউদ শেখকে সমর্থন দিয়েছিলাম। অন্যদিকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান আলমগীরকে সমর্থন দেন। সংসদ সদস্যের পরামর্শে দাউদকে সভাপতি হিসেবে নাম ঘোষণা করার সময় “দাউদ আওয়ামী লীগ করে না” মিজানুর চিল্লাচিল্লি শুরু করেন। এ সময় তাঁকে “আপনি (মিজানুর) আওয়ামী লীগ করেন নাকি, আপনার তো এখনো বিএনপি কমিটিতে নাম আছে” বলার পর হট্টগোল শুরু হয়। নেতাদের নির্দেশে আমি কার্যালয়ে চলে আসি। পরে লাঠিসোঁটা নিয়ে আমার কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে।’
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। ঝামেলা হওয়ার আগেই আমি চলে এসেছি। আর আমার কোনো প্রার্থী ছিল না।’
কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী হক বলেন, সম্মেলনে সভাপতি পদে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনের পক্ষ নেন। সভাপতি পদে তিনজন প্রার্থী ছিলেন। এ জন্য সভাপতি হিসেবে কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি। পরে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে হট্টগোল হয়।