উৎপাদন এলাকায় কাঁচা মরিচের দাম ডাবল সেঞ্চুরি পার

কাঁচা মরিচের বাজার
ফাইল ছবি

বগুড়া শহরের ফতেহ আলী সবজি বাজারের একটি দোকানে এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম জানতে চান একজন ক্রেতা। এ সময় বিক্রেতা ২৬০ টাকা কেজি চেয়ে বলেন, ‘দাম করা চলবি না, বিন্দি জাতের কড়া ঝালের পত্তা। একদর।’

দাম শুনে দোকানির দিকে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে ছিলেন ক্রেতা রাশেদ জামান। তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও এক কেজি কাঁচা মরিচ কিনলাম ১০০ টাকায়, সপ্তাহের ব্যবধানে ডাবল সেঞ্চুরি পার!’ এ কথা শুনে বিক্রেতা বলেন, ‘বাদলা আর খরাত খ্যাত মরে শ্যাষ, বাজারত সরবরাহ কম। দামও তাই চড়া। আরও বাড়বে।’

শুক্রবার সকালে এ দৃশ্যের দেখা মেলে। এদিন শহরের রাজাবাজারেও ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। ক্রেতাদের ভাষ্য, কাঁচা মরিচের উৎপাদন এলাকা হিসেবে খ্যাত বগুড়া। অথচ এখানেই এর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। সবজির পাইকারি মোকাম মহাস্থানেও বেড়েছে দাম।

বাজার ঘুরে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগেও খুচরা পর্যায়ে এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল গড়ে ১০০ টাকা। এখন কাঁচা মরিচ মানভেদে প্রতি কেজি ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

রাজাবাজারের কাঁচা মরিচ বিক্রেতা গোলজার আলী বলেন, ‘কাঁচা পত্তার (মরিচের) দাম গেল কোরবানির ঈদ থ্যাকেই লাফাচ্চিল। ঈদের আগে পত্তা বেচাবিক্রি হচ্চে ৬০ টেকা কেজি দরত। সেই পত্তা ঈদত এক লাফে সেঞ্চুরি হাঁকল। এখন ডাবল সেঞ্চুরি পার করচে।’

সকালে রাজাবাজার ও ফতেহ আলী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২২০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এ ছাড়া বিন্দি জাতের কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছিল ২৬০ টাকা কেজি দরে। দাম শুনে অনেক ক্রেতাকেই খালি হাতে ফিরতে দেখা গেছে।

কাঁচা মরিচের পাইকারি বেচাবিক্রি হয় রাজাবাজারে। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৫০ মণ কাঁচা মরিচ বিক্রির জন্য আসে। কিন্তু শুক্রবার পুরো বাজারে মরিচ এসেছিল ৪ থেকে ৫ মণ।

জানতে চাইলে পাইকারি বিক্রেতা সেলিম মিঞা বলেন, মোকামে টাকা দিয়েও কাঁচা মরিচ মিলছে না। কৃষকের মরিচখেত নষ্ট হয়েছে। বাজারে মরিচ কিনতে এসে দাম শুনে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন।

ফতেহ আলী বাজারে কাঁচা মরিচ কিনতে এসেছিলেন শহরের কাটনারপাড়া এলাকার শাহিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগেও এক কেজি কাঁচা মরিচ মিলেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এখন দাম ছয় গুণ বেড়েছে। আগে বাজার থেকে এক কেজি কাঁচা মরিচ কিনতাম ৫০ টাকায়। এখন দাম বাড়ার কারণে ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনতে ৬০ টাকা গুনতে হচ্ছে।’

বাজারে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গেলে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে বলে মনে করেন রাজাবাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় কাঁচা মরিচের মতো পণ্য আমদানিতে আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। এতে দামে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

শুক্রবার সকালে মহাস্থান হাট সবজির আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাহিদা বেশি হওয়ায় হঠাৎ বেড়েছে কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন সবজির দাম। পাইকারি পর্যায়ে মহাস্থান বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ সকালে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ এক সপ্তাহ আগে গড়ে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।

পাইকারি এই বাজারে অন্য সবজির দামও বেড়েছে। পটোল, বেগুন, শসা ও মুলা প্রতি মণ ৮০০, কাঁকরোল ও কচুমুখী প্রতি মণ ১ হাজার, জালি কুমড়া প্রতিটি ৩০ ও ছাচি লাউ ২৫ টাকা করে বিক্রি হয়েছে আজ।

চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাম কয়েক গুণ বেড়েছে জানিয়ে মহাস্থান হাট কাঁচা ও পাকা মাল আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পাইকারি এই মোকাম থেকে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ছাড়াও সারা দেশে কাঁচা মরিচ যায়। হাটে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও কাঁচা মরিচের চাহিদা বেড়েছে।