চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
৩২ লাখ টাকার রোগনির্ণয় যন্ত্র পড়ে আছে সাড়ে পাঁচ বছর
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে পাঁচ বছর আগে প্রায় ৩২ লাখ টাকায় কেনা হয় আলট্রাসাউন্ড স্ক্যানার। এক দিনের জন্যও এটি ব্যবহার করা হয়নি। এতে বাড়তি টাকা দিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে হচ্ছে।
ধুলামাখা সাদা কাপড়ের নিচে রাখা আছে রোগনির্ণয় যন্ত্রটি। আধুনিক যন্ত্রটি দেখতে সাধারণ। তবে দাম প্রায় ৩২ লাখ টাকা। এই যন্ত্র দিয়েই শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের দ্রুত রোগ নির্ণয় করার পরিকল্পনা ছিল। তবে তা হয়নি। সাড়ে পাঁচ বছর আগে কেনা যন্ত্রটি এক দিনের জন্যও ব্যবহার করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) আলট্রাসাউন্ড স্ক্যানারের অবস্থা এটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় যন্ত্রটি কেনা হয়েছিল ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। দাম নিয়েছিল ৩১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। একই বছরের ডিসেম্বরে যন্ত্রটি চিকিৎসাকেন্দ্রে হস্তান্তর করা হয়েছিল। বর্তমানেও এটি চিকিৎসাকেন্দ্রের ডায়াগনস্টিক ল্যাবে রয়েছে।
প্রশিক্ষিত অপারেটর না থাকায় যন্ত্রটি চালু করা সম্ভব হয়নি। প্রশাসন যদি আমাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে, তাহলে এটি চালু করা সম্ভব।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আলট্রাসাউন্ড স্ক্যানার যন্ত্রটি চালু না থাকায় তাঁরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দামি এ যন্ত্র এভাবে ফেলে রাখার পেছনে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দায়ী। এই উদাসীনতার কারণে বাড়তি টাকা দিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোস্তফা খালিদ বিন শামস প্রথম আলোকে বলেন, ‘যন্ত্রটি চালু করা না গেলে এত টাকা দিয়ে তা কেনার দরকার ছিল না। যন্ত্রটি চালুর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে এত দিনে এটি থেকে অনেকেই উপকৃত হতেন।’
যন্ত্রটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এর কার্যক্ষমতা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমিত মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো যন্ত্রই দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার ছাড়া ফেলে রাখলে তার বিভিন্ন অংশের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। এ ছাড়া প্রতিটি যন্ত্র ক্রয়ের পর তার ‘ওয়ারেন্টি পিরিয়ড’ থাকে। সেটি পার হলে মেরামতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হবে।
যন্ত্রটির কাজ কী
আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান বা ইউএসজি একটি মেডিকেল ইমেজিং (চিত্র) পরীক্ষা। এটি শব্দতরঙ্গের মাধ্যমে শরীরের ভেতরের অঙ্গের চিত্র তৈরি করে। আলট্রাসাউন্ড চিত্রগুলো একজন চিকিৎসককে অভ্যন্তরীণ অঙ্গ দেখতে ও বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করতে সহায়তা করে।
চুয়েট চিকিৎসাকেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ মেডিকেল কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন,‘আমাদের কাছে বিভিন্ন সময় পেট ফোলা, ব্যথা বা এ–জাতীয় নানা সমস্যা নিয়ে রোগীরা আসেন। তখন আমরা তাঁদের আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকি। কিন্তু এখানে প্রশিক্ষিত অপারেটর না থাকায় যন্ত্রটি চালু করা সম্ভব হয়নি। প্রশাসন যদি আমাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে, তাহলে এটি চালু করা সম্ভব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম। যন্ত্রটি চালু না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে চিকিৎসাকেন্দ্রে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় এটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। শূন্য পদ না থাকায় নতুন চিকিৎসকও নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের আওতায় এনে এটি চালু করার পরিকল্পনা তাঁদের রয়েছে।
প্রশাসনের গাফিলতির কারণে যন্ত্রটি চালু হচ্ছে না বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতির কারণেই যন্ত্রটি পড়ে আছে। যেকোনো যন্ত্র কেনার আগে সেটা কীভাবে চালানো হবে, তার পরিকল্পনা থাকতে হবে এবং সে অনুযায়ী আগাতে হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখানে সেটি করা হয়নি।