সিলেট সিটি করপোরেশনের কাজ নিয়ে আ.লীগ নেতার অসন্তোষ

আসাদ উদ্দিন আহমদ
ছবি: সংগৃহীত

সিলেট সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়নকাজকে ‘পরিকল্পনাহীন’ দাবি করে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক প্রশাসক আসাদ উদ্দিন আহমদ। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনি এ বিবৃতি দেন।

আসাদ উদ্দিন আহমদ বিবৃতিতে বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিকল্পনাহীন কাজে নগরবাসীর দুর্ভোগ ও ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। নগরের রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। ফলে জনগণকে চলাচলের ক্ষেত্রে অসহনীয় কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। এ সময় তিনি নগরের ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট ও জলাবদ্ধতায় সৃষ্ট দুর্ভোগ কমাতে সিটি কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে আসাদ উদ্দিন আহমদ অভিযোগ করেন, নগরের বেশির ভাগ ব্যস্ততম সড়কে মাসের পর মাস যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি করে ফেলে রাখা হয়েছে। উন্নয়নকাজ কোথাও অর্ধেক করে, কোথাও অসম্পূর্ণ অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। এতে একদিকে যেমন তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে পথচারী ও যান চলাচলে মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে কাদামাটি আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলার কারণে বছরজুড়ে এসব সড়ক দিয়ে চলাচলকারী মানুষের দুর্ভোগ লেগেই আছে। সিটি করপোরেশনের পরিকল্পনাহীন কাজের মাশুল দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

আসাদ উদ্দিন আহমদ বিবৃতিতে বলেন, সম্প্রতি মাত্র এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে প্রায় পুরো নগর পানিতে তলিয়ে যায়। সিটি করপোরেশনের কোনো নজরদারি না থাকা, ড্রেনের কাজ যেনতেনভাবে করে বন্ধ করা, পানি প্রবাহের বাঁধগুলো অপসারণ না করেই ড্রেনের ওপর স্ল্যাব বসানোয় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। এমন দায়সারা কাজ এবং সময়মতো ড্রেনগুলো পরিষ্কার না করার কারণেই জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে।

আরিফুল হক চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

সিটি করপোরেশনকে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আখ্যা দিয়ে আসাদ উদ্দিন আহমদ বিবৃতিতে বলেন, বর্ষার মৌসুম আসার আগেই নালা-নর্দমা পরিষ্কার করা, যথাসময়ে মশকনিধনের মাধ্যমে মশার উপদ্রব থেকে নগরবাসীকে মুক্ত রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া এবং পর্যাপ্ত পানীয় জলের সরবরাহ নিশ্চিত রেখে নগরবাসীকে স্বস্তি দেওয়াই করপোরেশনের মূল কাজ। অথচ এই কাজগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি শুধু বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকে। এটি নগরবাসীর মনে নানা ধরনের প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে গতকাল রাতে যোগাযোগ করা হয়। মেয়র বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছুদিন আগে সিলেটে এক অনুষ্ঠানে আমার কাজের প্রশংসা করে বক্তব্য দেন। কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়নে সম্প্রতি সিলেট সিটি করপোরেশন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দেশ সেরার পুরস্কার অর্জন করেছে। এ ছাড়া নগরবাসীও জানেন, কত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আমি কাজ করে চলেছি। হঠাৎ তিনি (আসাদ উদ্দিন আহমদ) কেন এমন বিবৃতি দিলেন, তা জানি না। তবে এতে আমার ব্যক্তিগত কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।’

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর সর্বশেষ অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তৎকালীন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তবে সে নির্বাচনে তৎকালীন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান (প্রয়াত) দলীয় মনোনয়নে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ওই নির্বাচনে বিএনপিদলীয় প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী টানা দ্বিতীয়বারের মতো জয় পান। আগামী বছরের মাঝামাঝি সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। এতে আসাদ মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপর আছেন।