পাগলা মসজিদের সিন্দুক খুলে ২৭ বস্তা টাকা ও বিপুল স্বর্ণালংকার, চলছে গণনা

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানসিন্দুকের টাকা গণনার কাজ করছে মাদ্রাসার প্রায় দেড় শতাধিক খুদে শিক্ষার্থী, ব্যাংকের অর্ধশত কর্মী এবং মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মিলে প্রায় আড়াই শ লোক। আজ শনিবার সকালে জেলা শহরের নরসুন্দা নদীর তীরের মসজিদ প্রাঙ্গণেছবি: তাফসিলুল আজিজ

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের ৯টি দানসিন্দুক ও একটি বড় স্টিলের ট্রাংক ৪ মাস ১০ দিন পর খুলে ২৭ বস্তা টাকাসহ বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া গেছে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সিন্দুক খুলে শুরু হয় গণনার কাজ।

জেলা শহরের নরসুন্দা নদীতীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক এই মসজিদে আছে ৯টি লোহার দানসিন্দুক। তবে এবার রোজা ও ঈদের কারণে সিন্দুকগুলো আগেই পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় সপ্তাহ দুয়েক আগে দুটি সিন্দুকের সমান আকারের আরও একটি স্টিলের ট্রাংক যোগ করা হয়।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের নরসুন্দা নদীতীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ
ছবি: তাফসিলুল আজিজ

মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাধারণত তিন থেকে সাড়ে তিন মাস পরপর দানসিন্দুক খুললেও এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে কিছুটা দেরিতে, অর্থাৎ ৪ মাস ১০ দিন পর খোলা হয়েছে। তাই এবার সর্বোচ্চ ২৭ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। এর আগে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর খোলা হয়েছিল দানবাক্সগুলো। তখন ২৩ বস্তার মধ্যে ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকাসহ বৈদেশিক মুদ্রা, সোনার গয়না ও হীরা পাওয়া গিয়েছিল। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত অসংখ্য মানুষ টাকা ছাড়াও পাগলা মসজিদে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন বলে জানায় মসজিদ কর্তৃপক্ষ।

আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের নেতৃত্বে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক কাজী মহুয়া মমতাজের উপস্থিতিতে দানসিন্দুক ও ট্রাংক খোলা হয়। প্রথমে টাকাগুলো লোহার সিন্ধুক ও ট্রাংক থেকে ২৭টি বস্তায় ভরা হয়। পরে মেঝেতে ঢালা হয়। বেলা ১১টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় গণনার কাজ চলছিল। মাদ্রাসার প্রায় দেড় শতাধিক খুদে শিক্ষার্থী, ব্যাংকের অর্ধশত কর্মী এবং মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মিলে প্রায় আড়াই শ লোক টাকা গণনা করছেন। গণনা শেষে মোট টাকার পরিমাণ জানানো হবে।

এই সিন্দুকগুলোতে টাকা দান করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ব্যক্তিরা। এবার পাগলা মসজিদের ৯ সিন্দুক ও এক বড় ট্রাংকে পাওয়া গেছে ২৭ বস্তা টাকাসহ বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা
ছবি: তাফসিলুল আজিজ

দানসিন্দুক খোলার সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া ও মসজিদ কমিটির সদস্য সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. আসাদুল্লাহসহ অন্য সদস্যরা।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, সকাল থেকে টাকার সিন্দুক খোলা, বস্তায় ভরে এনে গণনা শেষে ব্যাংকে সব টাকা নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তার কাজে তিনিসহ পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। গণনার দিন ছাড়াও বাকি দিনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন সিন্দুক নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করেন।

পাগলা মসজিদের দানসিন্দুকের টাকা গণনার কাজ করছেন ব্যাংকের কর্মীরাও
ছবি: তাফসিলুল আজিজ

জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ছয়তলাবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য একটি বড় আকারের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তাতে মসজিদ-মাদ্রাসা মিলিয়ে অর্ধলাখ মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারবেন। একসঙ্গে পাঁচ হাজার নারীর আলাদাভাবে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকবে। সেটির জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রকৌশলীদের। তাঁরা যাচাই-বাছাই করে নকশা চূড়ান্ত করে দিলেই আগামী মাস থেকে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে। এতে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা।