রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে মারধর, মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেলেন চাচা-ভাতিজা
বাগেরহাটে দিনদুপুরে চাচা-ভাতিজাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে মারধর ও জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ রোববার দুপুরে বাগেরহাটের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের অদূরে জেলা কারাগার সড়ক থেকে মো. জাহাঙ্গীর কাজী (৪২) ও মো. ইয়াসিন বিশ্বাস (৩৫) নামের দুই ব্যক্তিকে অপহরণের ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী দুজন মোংলায় বসবাস করলেও তাঁদের দুজনের বাড়ি খুলনা জেলার কয়রা উপজেলায় তেঁতুলতলা গ্রামে। সুন্দরবনে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন তাঁরা। পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে অর্ধলক্ষাধিক টাকা আদায়ের পর রোববার বিকেলে জিম্মিকারীরা তাঁদের ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালী মোড়ে ফেলে গেছে।
ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘সামনেই জেলখানা, তাকাইলে দেখা যায়। পাশে মনে হয় দেড় শ গজ হবে না পুলিশ সুপারের কার্যালয়। এখান থেকে মানুষ উঠায় নিয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে এসে যেন ছোঁ দিয়ে নিয়ে গেল। মাইরও দিছে।’
অপহৃত জাহাঙ্গীর ও ইয়াসিনের সঙ্গে মোংলা থেকে বাগেরহাটে এসেছিলেন মো. রুমি শেখ। তিনি বলেন, ‘কোর্টে (আদালতে) আমাদের কাজ ছিল। আমার এক আত্মীয় আছে জেলহাজতে, জাহাঙ্গীর ভাইয়েরও এক ছোট ভাই আছে। কোর্টের কাজ সেরে আমরা হেঁটে সেখানে (কারাগারে) যাচ্ছিলাম।’
ঘটনার বর্ণনা করে রুমি শেখ বলেন, ‘ফোনে কথা বলতে বলতে আমি একটু পেছনে পড়ি, হঠাৎ দেখি কয়টা বাইক (মোটরসাইকেল) নিয়ে এসে জাহাঙ্গীর ভাই আর ইয়াসিনকে পিটিয়ে রাস্তায় শুয়ায়ে ফেলছে। পাঁচ-ছয়জন মিলে তাঁদের বাইকে তুলে জোরে চালায়ে দশানির দিকে চলে গেছে। তারপর থেকে ফোন দিচ্ছিলাম, কিন্তু পাচ্ছিলাম না। এর অনেক পরে ফোন রিসিভ করছে, তখন টাকা দাবি করতেছে।’
রুমি শেখ ও জাহাঙ্গীরের পরিবার বলছে, জাহাঙ্গীর কাজী ও ইয়াসিন বিশ্বাসকে জিম্মি করার পর জাহাঙ্গীরের মুঠোফোন থেকেই অপহরণকারীরা ফোন করে। সেই নম্বর থেকে কথা বলে টাকা চাওয়া হয়েছে। জাহাঙ্গীর আর ইয়াসিনকে মারধর করা হয়েছে আর টাকা চেয়েছে জিম্মিকারীরা। পরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিবারের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা আদায়ের পর বিকেল সোয়া চারটার দিকে ওই দুজনকে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালী এলাকায় ফেলে যায় জিম্মিকারীরা।
জাহাঙ্গীর কাজী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে খুব মাইরছে। রাস্তায় লোকজন ছেল, কিন্তু কেউ আগুইনি। আমার মনে হয় হাত-পা ভাইঙ্গা গেছে।’ কারা তাঁকে তুলে নেয় জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি আগে তাগোর কাউরে চিনি না। এখান থেকে তুলে নিয়ে গেছে, চুলকাঠীর দিকে নিয়ে হাইওয়েতে উঠেছে। তারপর আরও চালায়ে এক জায়গায় নিছে। চারটে মোটরসাইকেল ছিল। আরও সেখানে লোক ছিল। আমার কাছে ৫ হাজার টাকা ছিল, নেছে। আর ফোন করে আরও ৫৫ হাজার টাকা নেছে বাড়িরতে। আমারে মারছে আর বাড়ি টাকা চাইছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাহমুদ-উল-হাসান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে মুখে মুখে শুনেছি। এ নিয়ে আমরা কাজ করতেছি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’