যে ঘুম ভাঙানো ঠিক নয়

শহরের কোলাহল ছাপিয়ে এভাবেই নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি
ছবি: প্রথম আলো

শুধু এক পায়ে স্যান্ডেল। সেটা খুলে রেখেছেন। আরেক পায়ে স্যান্ডেল নেই। মূলত ওই ব্যক্তির একটা পা নেই। তবে কৃত্রিম পা আছে। হাতের লাঠিটাও পাশে রেখেছেন। সঙ্গে থাকা ব্যাগকে বানিয়েছেন বালিশ। এভাবেই এক ব্যক্তি ঘুমিয়ে পড়েছেন। এটি রাজশাহী নগরের ব্যস্ততম এলাকা। হর্ন বাজিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বড় বড় গাড়ি। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাশের ফুটপাত দিয়ে ছুটছে মানুষ। এই কোলাহলের মধ্যে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন এই ব্যক্তি।

ঘড়িতে তখন সকাল সাড়ে ৯টা। রাজশাহীতে মিষ্টি শীতের আবহ। গতকাল রোববার রাজশাহী নগরের গৌরহাঙ্গা কবরস্থান মসিজদের পাশে এই দৃশ্য চোখে পড়ে। গামছা বিছিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন ওই ব্যক্তি। বয়স প্রায় ৬০। মুখে সাদা দাড়ি। গোঁফ কামানো। ঘুম থেকে উঠেই যেন নাগাল পান সেজন্য কৃত্রিম পাটা খুলে মাথার কাছে রেখেছেন। এমনও হতে পারে, চলার সম্বল ওই পা কেউ যেন চুরি না করতে পারে সেজন্য নিজের নাগালের মধ্যেই রেখেছেন।

কৃত্রিম পায়েও তাঁর শরীরের মতোই বয়সের ছাপ। মাথার দিকটা ভেঙে গেছে। তলার অবস্থাও ভালো না। কিছু অংশ খুলে গেছে। হাঁটু বরাবর একটি ধাতব পাত লাগানো রয়েছে। জং ধরা নাটগুলো দেখেই পায়ের বয়সটা আন্দাজ করা যাচ্ছে। কাটা পায়ের অবশিষ্টাংশে একটা মোটা কাপড় প্যাঁচানো রয়েছে, যেন চলার সময় ব্যথা না লাগে। গায়ে খয়েরি রঙের একটি শার্ট। বুকের কাছে বোতাম খোলা। এক নিমিষে মনটা ভাবনার আকাশে উড়ে গেল। মানুষটা একদিন নিশ্চয় কর্মক্ষম ছিলেন। হয়তো কোনো দুর্ঘটনায় পাটা হারিয়েছেন। অচল হয়েছেন বলেই বোধহয় দিনের শুরুতে এভাবে পথের ধারে পড়ে থেকে ঘুমানোর অবসরটা মিলেছে।  

পাশেই একজন পথচারি বসেছিলেন। এদিকে তাঁর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। লোকটি কতক্ষণ আগে ঘুমিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিলেন না। বোঝা গেল তিনিও হয়তো কোনো পথচারী। তবে এ বিষয়ে তার কোনো মাথা ব্যথা নেই।

ঘুমিয়ে থাকা মানুষটার নাম-পরিচয় গেল না। তাঁর সঙ্গেও কেউ নেই। সঙ্গে শুধু ছোট্ট একটি ব্যাগ। তার ভেতরে বেশি কিছু আছে বলেও মনে হলো না। একবার মনে হলো মানুষটা ডেকে তাঁর নাম পরিচয় জেনে নিই। কিন্তু ভয় হলো, মানুষটা জেগেই যদি প্রশ্ন করেন কেন তাঁর ঘুম ভাঙানো হলো! এই প্রশ্নের কোনো জবাব কাছে নেই। তাছাড়া নগরের এত কোলাহলের মধ্যেও নিশ্চিন্তে যিনি এমন শান্তির ঘুম ঘুমাতে পারেন, তাঁর ঘুম ভাঙানো ঠিক না। এই ঘুম ভাঙানো যায় না।