বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগ
টানা কয়েক দিন বৃষ্টি হলে ভোগান্তির শেষ থাকে না। তখন নিচু জায়গার পাশাপাশি আশপাশের বাড়িঘরেও পানি ঢুকে পড়ে।
দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে কিশোরগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাটে পানি জমে যাওয়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কিশোরগঞ্জ শহরের সড়কগুলো হয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করেন। অথচ বৃষ্টি হলেই সড়কগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তখন এসব সড়কে ভোগান্তিও হয় সবচেয়ে বেশি।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভাভুক্ত অনেক সড়কের অবস্থাই এখন নাজুক। এক দিন বৃষ্টি হলেই সড়কের অবস্থাগুলোতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় জনসাধারণের। টানা কয়েক দিন বৃষ্টি হলে ভোগান্তির শেষ থাকে না। তখন নিচু জায়গার পাশাপাশি আশপাশের বাড়িঘরেও পানি ঢুকে পড়ে। সেই পানির সঙ্গে বাড়ির পয়োবর্জ্যসহ ময়লা-আবর্জনা সড়কে চলে আসায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ ক শ্রেণির পৌরসভা। প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটারের এ পৌরসভায় বাসিন্দার সংখ্যা ১ লাখ ৬৭ হাজারের বেশি। পৌরসভার আওতায় রাস্তা আছে ৬৫ কিলোমিটার। তবে বেশির ভাগ রাস্তায়ই নিয়মিত সংস্কারকাজ হয় না। ফলে রাস্তাগুলোর অবস্থা এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। বিশেষ করে বর্ষাকালের জলাবদ্ধতা বাসিন্দাদের চরমভাবে ভোগাচ্ছে।
পৌরসভার আওতাধীন অন্তত ৪০ কিলোমিটার সড়কই বর্ষাকাল এলে পানিতে ডুবে যায়। এর মধ্যে আবার ২৫ কিলোমিটার ভাঙাচোরা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা শহরের নগুয়া, আলোরমেলা, নতুন স্টেডিয়াম ও পুরাতন কোর্ট এলাকার রাস্তাগুলোর। সামান্য বৃষ্টিতেই কয়েক বছর ধরে এসব এলাকায় রাস্তার ওপরে হাঁটুপানি জমে যাচ্ছে। পুরাতন কোর্ট এলাকায় রয়েছে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়, জেলা শিশু একাডেমিসহ বেশ কটি সরকারি দপ্তর। এ ছাড়া পাশের আবাসিক এলাকায় হাজারো লোকের বসবাস। জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ স্থানীয় বাসিন্দা ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিত্যদিনের সঙ্গী।
পুরাতন কোর্ট এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে ঘর থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে যায়। ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে পারে না। এলাকার যা অবস্থা, তাতে যানবাহন চলা দায়। আবার পচা-নোংরা পানি মাড়িয়ে চলতে গেলে চর্মরোগে আক্রান্ত হতে হয়।
গত বুধবার কিশোরগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টানা বর্ষণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। শহরের কাচারিবাজার, বড়বাজার, পুরান থানা বাজার, আলোরমেলা এলাকা, নগুয়া, বত্রিশ, হয়বতনগর, পুরোনো কোর্ট এলাকা, হারুয়া, গাইটাল, নিউটাউন, নীলগঞ্জ রোড, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলো বেহাল। প্রায় জায়গায় নালার পচা আবর্জনা রাস্তার ওপর জমে থাকা পানিতে মিশে আছে। আনাচকানাচে পানি জমে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। শহরের বত্রিশ, সুইপার কলোনি, বড় বাজার, কাচারিবাজার, পুরান থানা, নগুয়া প্রথম মোড় এলাকায় রাস্তার ওপর আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হচ্ছে।
শহরবাসী আতাউর রহমানসহ কয়েকজন বলেন, জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ দুটি। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও সঠিকভাবে পানিনিষ্কাশনের স্থায়ী ব্যবস্থার অনুপস্থিতি। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই শহরে বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়। আবার শহরে পর্যাপ্ত নালা ব্যবস্থা নেই। যে কয়টা নালা আছে, সেগুলোও ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। ফলে ঠিকমতো পানিনিষ্কাশন হয় না। অপরিকল্পিত সড়কের পাশে বাড়িঘর করায় নালাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। নালা ঠিক করা ছাড়া সড়কের জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব নয়।
পৌরসভার মেয়র পারভেজ মিয়া ওমরা হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে আছেন। তাই জলাবদ্ধতার বিষয় নিয়ে কথা হয় পৌরসভার সচিব হাসান জাকিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, শহরের বিভিন্ন এলাকায় নালার সংস্কারকাজ অব্যাহত রয়েছে। কিছু এলাকায় বড় বড় নালার পাশাপাশি ছোট ছোট নালা ও রাস্তার নির্মাণকাজ করা হচ্ছে। অনেকগুলোর দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এগুলোর কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমে যাবে। যত দ্রুত সম্ভব সঠিকভাবে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে সমস্যার সমাধান করবেন তাঁরা।