সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি সমাজ গঠনে প্রথম আলো কাজ করছে। ইতিমধ্যে পাঠকের আস্থাও অর্জন করেছে। আগামী দিনে প্রথম আলোর কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। সামনে জাতীয় নির্বাচনেও প্রথম আলো যেন সব দল ও ভোটারদের আকাঙ্ক্ষার বিষয়ে সঠিক চিত্র প্রকাশ করে। আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রথম আলোকে আরও সাহসী ভূমিকা পালন করতে হবে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে পঞ্চগড়ে প্রথম আলো আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। পত্রিকাটির ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পঞ্চগড় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত এ সমাবেশে জেলার বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন। তাঁরা প্রথম আলোর কাছে নানা ধরনের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।
এদিকে আজ চাঁদপুরেও প্রথম আলোর আয়োজনে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পঞ্চগড়ের অনুষ্ঠানে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) পঞ্চগড় জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম আলো নানা চড়াই–উতরাই পার হয়ে আজকের এই অবস্থানে এসেছে। বিগত সরকারের সময়ে যেমন নির্যাতিত, তেমনি বর্তমানেও তাদের ওপর বিভিন্ন ধরনের বাধা–বিপত্তি আছে।’ দেশে বাউলশিল্পীদের ওপর যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তার বিরুদ্ধে প্রথম আলোর শক্ত অবস্থান প্রত্যাশা করেন তিনি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পঞ্চগড় জেলা পেশাজীবী বিভাগের সভাপতি ও আইনজীবী আকবর আলী বলেন, ‘দেশে সামনে নির্বাচন, এখন যেহেতু কোনো দল ক্ষমতায় নেই, এই সময়ে প্রথম আলো এমন মুখপত্রের ভূমিকা পালন করবে, যাতে কোনো ন্যারেটিভ সৃষ্টি না হয়। কেউ যেন বলতে না পারে যে প্রথম আলো কোনো গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেছে। সেই সঙ্গে প্রথম আলো সব ধর্মের বিষয়কে সমানভাবে উপস্থাপন করবে, কোনো ধর্মকেই যেন খাটো করে না দেখে সেই আশা করছি।’
পঞ্চগড় জেলা স্বেচ্ছাসেবী ফোরামের আহ্বায়ক আহসান হাবিব সরকার বলেন, ‘শেখ হাসিনা এক দিনে স্বৈরাচার হয়ে ওঠেনি। এই দেশ, এই সংস্কৃতি, এই দেশের জনগণ সবাই মিলে আমরা তাকে স্বৈরাচার করে তুলেছি। এ জন্যই তৈরি করেছি, সংবাদমাধ্যমগুলো যখন পদলেহন করা শুরু করল, কণ্ঠ রোধ করা হলো, তারা নিজেরাও কণ্ঠ বন্ধ করে দিল, হাসিনা নিজেকে সর্বোচ্চ জায়গায় অধিষ্ঠিত করে সবকিছুর কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা করল। ওই একটি জায়গায় প্রথম আলো সর্বাবস্থায় চেষ্টা করছে মানুষের হয়ে কথা বলার। এ জন্য প্রথম আলোকে ধন্যবাদ।’
অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর উপসম্পাদক লাজ্জাত এনাব মহছি বলেন, ‘একটা পত্রিকার কাজ হচ্ছে সত্যকে তুলে আনা, পাওয়ারকে চ্যালেঞ্জ করা। যেখানে ক্ষমতা, যেখানে রাষ্ট্রীয় অর্থ বরাদ্দ, সেখানে চ্যালেঞ্জ করা একটা পত্রিকার দায়িত্ব। এটা করার কারণে দেখবেন যেকোনো সরকারই প্রথম আলোকে পছন্দ করে না। কিন্তু আমাদের শক্তির উৎসই হচ্ছে পাঠক। আমরা নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছি, কিন্তু পাঠকদের আমরা সব সময় পাশে পেয়েছি। পাঠকেরা আমাদের পাশে থেকে উদ্ধার করেছে।’
লাজ্জাত এনাব মহছি আরও বলেন বলেন, ‘এখন প্রিন্ট হয়তো সবাই পড়ে না, কিন্তু পাঠক কমেনি। পাঠকের রুচির পরিবর্তন হয়েছে, পাঠক প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তন করেছে। কেউ অনলাইনে খবর পড়েন আবার কেউ ভিডিও দেখেন। কিন্তু সাংবাদিকতা সাংবাদিকতার জায়গায় আছে। পাঠক কিন্তু সত্যটা জানতে চায়। আমরা এখন ফেসবুক সাংবাদিকতার মাধ্যমে অপসাংবাদিকতার শিকারও হচ্ছি। অনেক সময় ফেসবুকে ফেক নিউজ থাকে। সেগুলো আমাদের যাচাই–বাছাই করতে হয়। সে ক্ষেত্রে প্রথম আলো সব সময় সত্য উদ্ঘাটন করে প্রকাশের চেষ্টা করে।’
অনুষ্ঠানে সুজনের পঞ্চগড় জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তবিরুল বারী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি আশরাফুল আলম, গণ সংহতি আন্দোলনের পঞ্চগড় জেলা শাখার আহ্বায়ক সাজেদুর রহমান, এনসিপির পঞ্চগড় সদর উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী তানবিরুল বারী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) পঞ্চগড় জেলা আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাসদের পঞ্চগড় জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদ হোসেন, পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরকার হায়দার, বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পঞ্চগড় জেলার অন্যতম সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সুধী সমাবেশে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার রংপুর বিভাগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইউনুস শেখ, গণ অধিকার পরিষদের পঞ্চগড় জেলা শাখার আহ্বায়ক মাহাফুজার রহমান, পঞ্চগড় জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আদম সুফি, জেলা কালচারাল কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সুলতান মাহমুদ, জামায়াতে ইসলামীর পঞ্চগড় জেলা শাখার মিডিয়া বিষয়ক সম্পাদক শাহীদ আল ইসলাম, নারী উদ্যোক্তা খাদিজা আক্তার, মমতাজ পারভীন, পরিবেশকর্মী মাহমুদুল ইসলামসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর পঞ্চগড় প্রতিনিধি রাজিউর রহমান।
‘প্রথম আলোর নামের সঙ্গে কাজের মিল আছে’
‘আমি প্রথম আলো পত্রিকা ও পরিবারকে শুভেচ্ছা জানাই। কারণ, আমি নিজেও একজন প্রথম আলোর পাঠক। আমি বলব, প্রথম আলো পত্রিকাটি জনসাধারণের মন জয় করেছে আরও আগেই। প্রথম আলোর নামের সঙ্গে কাজের মিল আছে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
আজ বিকেলে চাঁদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. নাজমুল ইসলাম সরকার এ কথা বলেন।
সুধী সমাবেশে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও চাঁদপুর পৌর প্রশাসক মো. গোলাম জাকারিয়া বলেন, ‘আমি প্রথম আলোর একজন নিয়মিত পাঠক। কারণ, প্রথম আলোর অনুপ্রেরণা পেয়ে জীবনে আমি প্রথম সাংবাদিকতা করি। পরে সরকারি চাকরিতে যোগ দিই। কিন্তু প্রথম আলো পড়া ছাড়িনি। কারণ, প্রথম আলো মানুষকে আলোর পথ দেখায়।’
চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফর রহমান বলেন, ‘একটি সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিকেরা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। প্রথম আলো সেই দায়িত্ব নিয়ে প্রথম থেকে কাজ করছে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে আসছে। সেটা আগামীতে সততার সঙ্গে অব্যাহত রাখবে।’
চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ ইকবালুর রহমান বলেন, ‘আমি আমার চাকরিজীবনের প্রথম থেকে প্রথম আলো পড়ি। কারণ, প্রথম থেকে পত্রিকাটি নির্ভীক সাংবাদিকতা করে আসছে।’
চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায় বলেন, ‘প্রথম আলো সবার কথা বলে, ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে সব সময় সত্য বলে যাবে।’
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনার পর স্বাগত বক্তব্য দেন এবং সভা পরিচালনা করেন প্রথম আলোর চাঁদপুর প্রতিনিধি আলম পলাশ।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর হেড অব নিউজ (চট্টগ্রাম ডেস্ক) আশরাফ উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘শুরু থেকেই প্রথম আলোর লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট। আমরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে বিশ্বাস করব, কারও প্রতি কোনো পক্ষপাত করব না এবং সত্য বলব। প্রথম আলো সে লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়নি। প্রথম আলো সত্য বলেই পাঠকের আস্থা অর্জন করে যাচ্ছে। পাঠকের সেই আস্থাতেই প্রথম আলো এত দূর পাড়ি দিয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পেয়েছে।’
সব সরকারের আমলেই প্রথম আলোকে ক্ষমতাসীনদের চাপের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে আশরাফ উল্লাহ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় যখন ইন্টারনেট শাটডাউন ছিল, তখন ছাপা কাগজই একমাত্র তথ্য পাওয়ার উপায় ছিল। প্রথম আলো সে সময়ও পাঠকের অকুণ্ঠ সমর্থনে সত্য প্রকাশ করেছে। চাপের মুখেও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করেছে। এটা সম্ভব হয়েছে পাঠকের আস্থার কারণে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত সাহা, চাঁদপুর জেলা তথ্য কর্মকর্তা তপন ব্যাপারী, চাঁদপুরের বিশিষ্ট চিকিৎসক মাইনুল ইসলাম মজুমদার, চাঁদপুর জেলা জজ আদালতের পিপি ও জেলা মহিলা দলের সহসভাপতি কোহিনুর বেগম, লেডী প্রতিমা মিত্র বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোরশেদা ইয়াসমিন, চাঁদপুর জেলা গণফোরামের সভাপতি সেলিম আকবর, চাঁদপুর জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক মো. মাহবুব আলম, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি রহিম বাদশা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংগীতশিল্পী রূপালী চম্পক ও নারী উদ্যোক্তা তানিয়া ইশতিয়াক খান।