ব্যবসায়ীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলেন স্ত্রী, টাকা হাতিয়ে নেন স্বামী

গ্রেপ্তার মুন্না হোসেন ও তাঁর স্ত্রী মুক্তা খাতুন
ছবি: সংগৃহীত

স্বামী-স্ত্রী মিলে গড়ে তোলেন প্রতারক চক্র। প্রথমে স্ত্রী কৌশলে কোনো ব্যবসায়ীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন। এরপর আস্থা তৈরি করে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে স্বামী ও তাঁর সহযোগীরা মিলে গোপন ক্যামেরায় আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করেন। একপর্যায়ে স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ধরে ফেলার নাটক সাজিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীকে মারধর ও ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন তাঁরা।

গতকাল শুক্রবার রাতে পাবনায় এমন এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তাঁরা হলেন জেলা শহরের রাধানগর ময়দানপাড়া মহল্লার মোশারফ শেখের ছেলে মুন্না হোসেন (৩৪) ও তাঁর স্ত্রী মুক্তা খাতুন (২৫)। আজ শনিবার দুপুরে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পাবনা জেলা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার দম্পতি প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বড় ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে এ ধরনের কাজ করে আসছিলেন। এর আগেও তাঁরা একই ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছেন। গ্রেপ্তারের পর তাঁদের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ দুপুরে দুজনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

জেলা পুলিশ জানায়, পাবনার শহরে মুন্না হোসেনের একটি টেইলার্স রয়েছে। সেখান থেকে তিনি ও তাঁর স্ত্রী মুক্তা খাতুন তাঁদের লক্ষ্য ঠিক করেন। সম্প্রতি এক পাট ব্যবসায়ী দোকানে এলে স্বামী-স্ত্রী তাঁকে ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনা করেন। মুক্তা খাতুন পরিকল্পিতভাবে তাঁর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন ও মুঠোফোনে কথা বলতে থাকেন। এরপর বিশ্বাস অর্জনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা ধার নেন। পরে ধারের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে বাড়িতে ডেকে আনেন।

এরপর দুজন সহযোগীকে নিয়ে বাড়িতে এসে ওই ব্যবসায়ীকে আটক করেন মুন্না। একপর্যায়ে ওই ব্যবসায়ীকে মারধর ও ব্যবসায়ীর মুঠোফোনে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে টাকা দাবি করেন। বাধ্য হয়ে ওই ব্যবসায়ী নগদ ৫০ হাজার টাকা ও বিকাশে আরও ৭৩ হাজার টাকা দিয়ে নিজের মুঠোফোনটি ফেরত চান। কিন্তু তাঁরা মুঠোফোন ফেরত না দিয়ে আরও টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মাসদু আলম প্রথম আলোকে বলেন, স্বামী-স্ত্রীর প্রতারণায় অতিষ্ঠ হয়ে ওই ব্যবসায়ী বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী বিষয়টি জানার পর ডিবি পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একরাম মাহমুদকে প্রধান করে একটি দল গঠন করা হয়। দলটি তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁদের কাছে আপত্তিকর ছবিসহ ওই ব্যবসায়ীর মুঠোফোন ও নগদ পাঁচ হাজার টাকা পাওয়া যায়।