নোয়াখালীতে মা-মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণ: আরেকজনকে গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তারপ্রতীকী ছবি

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে মা ও মেয়েকে বেঁধে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে আরেক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশের একটি বিশেষ দল।

এর আগে গতকাল বিকেলে এ ঘটনার প্রধান আসামি এক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়েরকে (৫০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের দুজনকেই জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত দল জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

তদন্ত–সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র প্রথম আলোকে বলেছে, সর্বশেষ গ্রেপ্তার ব্যক্তির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিঁধ কাটার কাজে ব্যবহৃত কোদাল ও ভয় দেখানোর জন্য ব্যবহৃত ধারালো দা উদ্ধার করা হয়েছে। জেলা পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ওই ব্যক্তি ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে আর কারা যুক্ত, তাদের নাম জানিয়েছেন। আজ বুধবার এই দুজনকে আদালতে হাজির করা হতে পারে।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সুবর্ণচরে বসতঘরের সিঁধ কেটে মা ও মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সবাইকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। আজ বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমের কাছে বিষয়টি তুলে ধরা হবে।

নির্যাতনের শিকার নারীর মায়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার রাতে এক ব্যক্তি সিঁধ কেটে তাঁর মেয়ের ঘরে ঢোকেন। এরপর তিনি দরজা খুলে দিলে আরও দুজন প্রবেশ করেন। এরপর তাঁরা তাঁর মেয়ে ও নাতনির হাত-মুখ বেঁধে ফেলেন। তাঁদের মধ্যে দুজন তাঁর মেয়েকে (৩০) ধর্ষণ করেন, একজন নাতনিকে (১২) ধর্ষণ করেন। ঘটনার সময় তাঁর জামাতা বাড়িতে ছিলেন না। তিন থেকে চার দিন ধরে তিনি কাজের জন্য বাড়ির বাইরে ছিলেন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের রাতে সুবর্ণচরে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আলোচিত ওই ঘটনার মামলার রায়ে গতকাল সোমবার ১০ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক। এ মামলার প্রধান আসামি ছিলেন সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বার। আলোচিত মামলার রায়ের ২৪ ঘণ্টা না যেতেই একই উপজেলায় আরেকটি দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেল।

জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে সুবর্ণচরে মা ও মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গতকাল দুপুরে চরজব্বর থানায় একটি মামলা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার নারী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করেন। মামলায় আবুল খায়ের ও মো. হারুনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি একজনকে অজ্ঞাত হিসেবে দেখানো হয়।

মামলার পর এক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের ওরফে মুন্সি মেম্বারকে সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ চৌধুরী।