‘প্রক্সি’ দিতে এসে কারাগারে

আসামি রবিউলের পরিবর্তে আদালতে হাজির হন বিজন কুমার হালদার। আদালতের বিচারক জামিনের আবেদন মঞ্জুর না করে তাঁকে কারাগারে পাঠান।

বিজন কুমার হালদার
ছবি: সংগৃহীত

রাজবাড়ীতে একটি চাঁদাবাজি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিলেন এক যুবক। জামিন আবেদন নিয়ে আসা ওই যুবকের জামিন মঞ্জুর না করে তাঁকে কারাগারে পাঠান বিচারক। এরপর জানা যায়, ওই যুবক মামলার আসামিই ছিলেন না, তিনি অন্যের হয়ে ‘প্রক্সি’ হাজিরা দিতে এসেছেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজবাড়ীর ২ নম্বর আমলি আদালতে এ ঘটনা ঘটে।

প্রক্সি দিতে আসা যুবকের নাম বিজন হালদার (৩০)। তিনি পাংশা উপজেলা পৌর শহরের পারনারায়ণপুর গ্রামের অশান্ত চন্দ্রের ছেলে। যাঁর পরিবর্তে তিনি হাজিরা দিতে এসেছিলেন, সেই যুবকের নাম রবিউল ইসলাম ওরফে মুন্নু। রবিউলও একই গ্রামের বাসিন্দা রিয়াজ উদ্দিন শেখের ছেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১২ এপ্রিল চাঁদাবাজি ও অফিস ভাঙচুরের অভিযোগে পাংশা থানায় একটি মামলা করেছিলেন পাংশা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বিশ্বাস। এ মামলায় উপজেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক ফজলুল হকসহ (৪০) সাতজনের নাম উল্লেখ ও তিন-চারজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। মামলার ৭ নম্বর আসামি ছিলেন পারনারায়ণপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম।

গতকাল আদালতে মামলাটির অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার কথা ছিল পুলিশের। এ জন্য আগেই মামলার পাঁচজন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। এ সময় আসামি রবিউলের পরিবর্তে আদালতে হাজির হন বিজন কুমার হালদার। আদালতের বিচারক জামিনের আবেদন মঞ্জুর না করে তাঁদের সবাইকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বিজন কুমার প্রথমে কারাগারে নিজেকে রবিউল বলে পরিচয় দেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়।

রাজবাড়ী আদালতের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের শনাক্ত করার দায়িত্ব আইনজীবীদের। পাঁচজন আসামি আদালতে হাজির হয়েছিলেন। এর মধ্যে রবিউল ইসলামের পরিবর্তে বিজন কুমার হালদার নামের একজন হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু আদালত জামিনের আবেদন মঞ্জুর না করে তাঁকেসহ আরও চার আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বিজন কারাগারে প্রথমে রবিউল ইসলাম বলেই নিজেকে পরিচয় দেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তিনি সত্যতা স্বীকার করেন।

মামলার অভিযোগপত্র তৈরি করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে আদালতে দাখিল করা হবে।
মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান, পাংশা থানার ওসি

মামলার বাদী পাংশা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘আমি ওই সময় এজলাসকক্ষে ছিলাম। বিজন কুমারকে কাঠগড়ায় দেখে ভেবেছি, সে হয়তো অন্য কারও দায়ের করা মামলায় এসেছে। কারণ, আমার মামলায় বিজন আসামি ছিল না। রাতে প্রশাসনের কাছ থেকে জানতে পারলাম যে বিজন আমার দায়ের করা মামলায় প্রক্সি দিতে গিয়েছিল।’

মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী শহিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সকালে পাঁচজন আসামি উপস্থিত আছে মর্মে সই করে ঢাকায় গিয়েছিলাম। আমরা প্রথম দিন জাতীয় পরিচয়পত্র দেখি। এরপর আর সাধারণত দেখা হয় না। আর গতকাল মামলাটি পরিচালনা করেছেন জাহিদ উদ্দিন মোল্লা।’

তবে জাহিদ উদ্দিন মোল্লার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।

বিজন কুমার হালদারের বাবা অশান্ত চন্দ্র বলেন, গতকাল সকালে গৌতম নামের একজন বিজনকে ডেকে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পরই তাঁর ঘরে ফেরার কথা ছিল। পরে সন্ধ্যায় বাড়ির পাশের দোকান থেকে তিনি জানতে পারেন বিজনকে জেলে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের বিরুদ্ধে থানায় বা অন্য কোথাও কোনো মামলা নেই। সে ঢাকার বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী। এখানে বালুর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।’

মামলার আসামি রবিউল ইসলামের বাবা রিয়াজ উদ্দিন শেখ বলেন, ‘আমার ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। তিন-চার মাস ধরে সে ঢাকায় একটি বেসরকারি চাকরি করে। এবার ঈদে সে বাড়িতেও আসেনি। যুবলীগের নেতা ফরহাদের সঙ্গে ঘোরাফেরা করায় আমার ছেলেকে মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে।’

রাজবাড়ীর জেল সুপার আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আদালত তাঁদের কাছে যে নামে আসামি পাঠিয়েছেন, তাঁরা সেভাবেই বুঝে নেন। বিজন কুমার তাঁদের কাছে রবিউল ইসলাম নামেই পরিচয় দিয়েছেন। বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য কারাগারে আঙুলের ছাপ নেওয়ার কোনো ব্যবস্থাও ছিল না।

পাংশা থানার ওসি মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, মামলার অভিযোগপত্র তৈরি করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে আদালতে দাখিল করা হবে। রবিউলের পরিবর্তে অন্যজনের কারাগারে যাওয়ার বিষয়টি জানেন না তিনি। এটি যদি হয়ে থাকে, তাহলে এটি একধরনের জালিয়াতি।