শাকসু নির্বাচনে নারী প্রার্থী খুব কম, কারণ ‘ট্যাগিং-বুলিংয়ের ভয়’

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ফাইল ছবি

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (শাকসু) নির্বাচনে বিভিন্ন পদে ৯৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে মাত্র ৭ জন নারী প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে কেউই শীর্ষ পদে নেই। নারী প্রার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েও পরে প্রত্যাহার করেছেন। এর কারণ হিসেবে প্রার্থী ও নারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, ট্যাগিং, সাইবার বুলিং ও দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য ছাত্রীদের অংশগ্রহণ কম।

শাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক পদে চারজন, আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক পদে একজন ও সদস্য পদে মাত্র দুজনসহ মোট সাতজন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্য পদগুলোতে ৯০ জন ছাত্র। এই হিসাবে কেন্দ্রীয় সংসদে নির্বাচনে মোট প্রার্থীর তুলনায় নারী প্রার্থী মাত্র ৭ দশমিক ২১ শতাংশ।

ভোটার তালিকা অনুযায়ী, শাবিপ্রবিতে মোট ভোটার ৯ হাজার ১৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৩ হাজার ২১০ জন, যা মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ। নারী ভোটারদের তুলনায় কেন্দ্রীয় সংসদে নারী প্রার্থী হয়েছেন মাত্র শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ। প্রথম দিকে কেন্দ্রীয় সংসদে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছিলেন ১৫ জন প্রার্থী। কিন্তু চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, মাত্র সাতজন নারী প্রার্থী কেন্দ্রীয় সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

শাকসু নির্বাচনের জন্য এ পর্যন্ত তিনটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। প্যানেলগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ছাত্রদল–সমর্থিত ‘সম্মিলিত সাস্টিয়ান ঐক্য’ প্যানেলে একজন নারী প্রার্থী আছেন। ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘দুর্বার সাস্টিয়ান ঐক্য’ প্যানেলে তিনজন নারী প্রার্থী লড়ছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ‘সাধারণের ঐক্যস্বর’ প্যানেল থেকে দুজন নারী প্রার্থী আছেন। এর বাইরে প্যানেল ছাড়া ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক পদে একজন নারী প্রার্থী নির্বাচন করছেন।

ছাত্রীদের অংশগ্রহণ কম কেন

শাকসুতে আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে লড়ছেন তাছমিমা মাহফুজ। জানতে চাইলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘প্রথম কারণ হচ্ছে মেয়েদের অনীহা। ৫ আগস্টের আগে মেয়েরা অনেক সচেতন ছিল। এরপর ক্যাম্পাসে সবাই একসঙ্গে কাজ করবে—এমন ভেবেছিল। কিন্তু এমনটি হয়নি। এখন একটিই ধারণা তৈরি হয়েছে, যারা ক্ষমতায় যাবে, তারা পরিবর্তন হয়ে যাবে, নিজ স্বার্থে কাজ করবে। এ ছাড়া সম্প্রতি যে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন হয়েছে, সেখানের পরিস্থিতি দেখেও অনেকেই প্রার্থী হতে চায়নি।’

মনোনয়পত্র জমা দিয়ে পরবর্তী সময়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন—এমন একজন নারী শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে বিভিন্ন দলীয় প্যানেলে প্রার্থী হওয়ার জন্য আহ্বান করেছিল। কিন্তু স্বতন্ত্র থেকে ফরম তুলেছিলাম। প্রার্থী হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক যে সংস্কৃতি, তা খুবই ভয়াবহ। স্বতন্ত্র থেকে করলে যেমন একটি ভয় আছে, তেমন দলের সঙ্গে গেলেও “ট্যাগিং” আর “বুলিং”তো আছেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হবে; যা নারী প্রার্থীদের জন্য অত্যন্ত হতাশার।’

নারী প্রার্থী কম হওয়ার দুটি কারণের কথা বলেছেন শাকসু নির্বাচনের মুখপাত্র ও পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রথমত ছাত্রীরা পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। যদিও শাকসু একটি অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। তারপরও এখানে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ লাগে। রাজনৈতিক আলাপ–আলোচনা হয়। এ ছাড়া এখানে সময় দেওয়া লাগে প্রচুর। নির্বাচিত হয়ে গেলেও অনেক কাজ আছে। হয়তো ছাত্রীরা মনে করছে যে এতে তাদের পড়ালেখার ক্ষতি হতে পারে। দ্বিতীয়ত, বিগত দিনগুলোতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক নারী প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছে, জয়ী হয়েছে। নির্বাচিত হওয়ার পর বিশেষ করে নারী প্রার্থীরা রাজনৈতিক কারণে সাইবার বুলিং, তাদের নিয়ে স্লাট শেমিং করা হয়েছে। অনলাইনে বা অফলাইনে তারা হেনস্তার শিকার হয়েছে। এসব কারণে হয়তো শাকসুতে উল্লেখযোগ্যভাবে নারী প্রার্থী নেই। এসবের কারণে ছাত্রীদের পরিবার থেকেও প্রার্থী হতে নিরুৎসাহিত করা হয়।’