সমাবেশের নামে বিএনপির সহিংসতা করার পরিকল্পনা আছে: শিক্ষামন্ত্রী

কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। শুক্রবার দুপুরে চাঁদপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি বলেছেন, সমাবেশের নামে বিএনপির সহিংসতা করার পরিকল্পনা আছে। কারণ, বিএনপি-জামায়াতের এমন অতীত রেকর্ড আছে। আজ শুক্রবার দুপুরে চাঁদপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, আওয়ামী লীগ শান্তির স্বপক্ষে ও মানুষের অধিকারের পক্ষে। সেই দায়িত্ব আওয়ামী লীগ সব সময় পালন করে এসেছে। তাই সরকারের পাশাপাশি দলও দায়িত্ব পালন করবে। বিএনপি সমাবেশের নামে সহিংসতা করার পরিকল্পনা আছে বলে জনমনে আশঙ্কা রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশের মতো এমন একটি দেশে কোনো সহিংসতা করা কোনো রাজনৈতিক দলেরই উচিত নয়।

পরে চাঁদপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন শিক্ষামন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, ‘শিক্ষায় বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। কারণ, আমরা বঙ্গবন্ধুর পথ অনুসরণ করে চলার চেষ্টা করছি। বঙ্গবন্ধু শুধু ১৯৭০ সালের প্রাক্‌-নির্বাচনের ভাষণেই নয়, ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের যে নির্বাচনী ইশতেহার, সেখানেও শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে কতগুলো দিকনির্দেশনা দেওয়া ছিল, সেগুলোকে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে আমরা দেখেছি। আমরা ছয় দফার মধ্যে সরাসরি শিক্ষা না দেখলেও এর যে বিস্তারিত বিশ্লেষণ ছিল, সেখানে শিক্ষার কথা বলা ছিল। আর ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আমরা দেখেছি, বঙ্গবন্ধু তাঁর নির্বাচনী ভাষণে শিক্ষার কথা ব্যাপকভাবে বলেছেন।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, শিক্ষায় বিনিয়োগ হচ্ছে, শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ এবং জিডিপির ৪ ভাগ সেখানে বিনিয়োগ করা দরকার। যখন আমরা সারা বিশ্বে শুনি, শিক্ষায় জিডিপি কতভাগ বিনিয়োগ। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে শিক্ষাকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছিলেন এবং তিনি কুদরত-ই–খুদা শিক্ষা কমিশন তৈরি করেছিলেন। সেই কমিশন যে রিপোর্ট দিয়েছিল, সেটি ছিল অনেক সমৃদ্ধ। সেটি যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারতাম, আজকে আমরা শিক্ষায় বিশ্বে অনেক বেশি এগিয়ে থাকতাম। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর অন্য সব ক্ষেত্রে যেমন আমরা পিছিয়েছি, শিক্ষাও তেমনি পিছিয়েছি।’

দীপু মনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা দ্বিতীয় মেয়াদে যখন ক্ষমতায় এসেছেন, সেই সময় তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেটি ছিল তরুণ প্রজেন্মর জন্য ঘোষণা। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবতা। আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে অধীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছি এবং সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করে চলেছি। স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ। আর এর কেন্দ্র হচ্ছে স্মার্ট নাগরিক। সেই স্মার্ট নাগরিক হতে হলে শিক্ষার দিকে অর্থাৎ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও মনোভাব নিয়ে তৈরি হতে হবে। তার সবকিছু আমরা আমাদের নতুন শিক্ষাক্রমে নিয়ে এসেছি।’

শিক্ষাক্রমে যে পরিবর্তন এসেছে, তা নিয়ে অপপ্রচার ও গুজব রটানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘যাঁরা কোচিং ও গাইড বই বিক্রি করছেন, তাঁরাও এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তাঁরা এই ব্যবসা না করে অন্য ব্যবসা করতে পারবেন। তাঁদের কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু আমাদের এই শিক্ষাক্রমের পরিবর্তন বিষয়ে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। তাঁদের সন্তানদের এখন আর গাইড বই কিনে দেওয়া লাগবে না। তাদের প্রাইভেট পড়তে হবে না। তারা আনন্দের মধ্যে শিখবে। আমি সারা দেশের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলছি। তাঁরা এই শিক্ষাক্রমের বাস্তবচিত্র আমার কাছে তুলে ধরছেন। তাঁরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা খুবই আগ্রহী এই শিক্ষাক্রমে।’

ঢাবিয়ান চাঁদপুরের আহবায়ক ও চাঁদপুর সরকারি কলেজের শিক্ষক আলমগীর হোসেন বাহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটারের চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান, দৈনিক ঢাকার ডাক পত্রিকার সম্পাদক এ বি এম শামছুল হাসান। অনুষ্ঠানে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে চাঁদপুর জেলা থেকে ঢাকা বিশবিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।