নাফ নদী থেকে ১০ বাংলাদেশি জেলেকে অপহরণ

বাংলাদেশ–মিয়ানমারের সীমান্তকে ভাগ করেছে নাফ নদীছবি: গুগল স্যাটেলাইট মানচিত্র

কক্সবাজারের উখিয়ায় নাফ নদী থেকে বাংলাদেশি ১০ জন জেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে জেলেদের অপহরণ করা হলেও আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাটি জানাজানি হয়।

১০ জেলেকে অপহরণের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী। তাঁর দাবি, ‘নাফ নদীর মোদিরখাল এলাকায় মাছ ধরার সময় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সদস্যরা অস্ত্রের মুখে বাংলাদেশি ১০ জেলেকে ধরে ওপারে (রাখাইন রাজ্যে) নিয়ে গেছে। সেখানকার একটি চৌকিতে জেলেদের রাখা হয়েছে বলে জেনেছি। কিন্তু আরাকান আর্মি বাংলাদেশি জেলেদের কেন ধরে নিয়ে গেল বোধগম্য হচ্ছে না।’

ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, অপহৃত জেলে পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন। জেলে অপহরণের বিষয়টি তিনি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছেন।

অপহৃত জেলেরা হলেন পালংখালী ইউনিয়নের রহমতের বিল এলাকার বাসিন্দা জানে আলম (৩৫), আবদুর রহিম (৪০), আনোয়ারুল ইসলাম (৩৭), সাইফুল ইসলাম (৩০), আয়ুবুল ইসলাম (৩০), মো. শাহীন (২০), আবদুর রহিম (৫২), ওসমান গণি (৩০), ওসমান (৩৫) ও  আবুল হাশিম (৩৫)।

সীমান্তের একাধিক সূত্র ও পালংখালীর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাত চলছে। টানা আড়াই মাসের চলমান সংঘাতে আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপের উত্তরের বলিবাজার, নাকফুরা, কাওয়ারবিল ও দক্ষিণের নাইক্ষ্যংদিয়াসহ কয়েকটি এলাকাতে বিজিপির ১২টির বেশি সীমান্তচৌকি দখলে নেয়। আরাকান আর্মির সঙ্গে টিকতে না পেরে গত দুই মাসে ৬-৭ দফায় ৬১৮ জন মিয়ানমার সেনা ও সীমান্তরক্ষী বিজিপি সদস্য বাংলাদেশ পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়। পরে দুই দফায় সবাইকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।

রাখাইর রাজ্যে মর্টার শেল, গ্রেনেড বোমার বিস্ফোরণ এবং গুলি এসে পড়ার আতঙ্কে আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে  টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত লাগোয়া ২৭টি গ্রামের অন্তত সাত হাজার জেলে মাছ ধরতে নাফ নদীতে নামতে পারছেন না। ছয় দিন ধরে রাখাইন রাজ্যে মর্টার শেল ও গোলাগুলি বন্ধ থাকায় বাংলাদেশি জেলেরা নাফ নদীতে মাছ শিকারে নামছেন। এর মধ্যে ১০ জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় স্থানীয় অন্য জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।  

পুলিশ ও বিজিবি সূত্র জানায়, গত ২১ এপ্রিল সকালে টেকনাফের নাফ নদীর বদরমোকাম চ্যানেলে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে ছোড়া গুলিতে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের একটি মাছ ধরার ট্রলারে দুই জেলে মো. ফারুক (২৭) ও মো. ইসমাইল (২০)  গুলিবিদ্ধ হন। ওই ঘটনায় ক্ষোভ এবং গুলি ছোড়ার কারণ জানতে চেয়ে মংডু টাউনশিপের ১ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক বরাবরে প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছিলেন টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, উখিয়ার নাফ নদী থেকে বাংলাদেশি ১০ জেলে অপহরণের বিষয়টি তাঁর জানা নেই।

তবে উখিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানবীর হোসেন বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তিনি ১০ বাংলাদেশি জেলেকে মিয়ানমারে ধরে নিয়ে যাওয়ার খবরটি জেনেছেন। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বিজিবির মাধ্যমে ১০ বাংলাদেশি জেলেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।