পরিবেশ-প্রকৃতি ধ্বংস করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কাজ: সুলতানা কামাল

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় এক গণজমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। শুক্রবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেছেন, উন্নয়নের নামে পাহাড়-টিলা, নদী-খাল, হাওর-বাঁওড়, বন-বন্য প্রাণী—সবই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এভাবে দেশের পরিবেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। অবিলম্বে এসব কাজ বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিজেদের প্রয়োজনে সাধারণ মানুষকে সোচ্চার হতে হবে।

শুক্রবার বিকেলে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত বাজারে এক গণজমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

গোয়াইনঘাট উপজেলার হিদাইরখাল নদীর ওপরে ২০১৬ সালে অবৈধভাবে নির্মিত বাঁধ অপসারণ ও পরিবেশবিধ্বংসী সব কর্মকাণ্ড বন্ধের দাবিতে এ গণজমায়েতের আয়োজন করে বাপা, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ ও সারী নদী বাঁচাও আন্দোলন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার হাজারো মানুষ অংশ নেন।

পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বাংলাদেশের ও মানবজাতির শত্রু আখ্যা দিয়ে সুলতানা কামাল বলেন, ‘নদী একটি জীবন্ত সত্তা। প্রবহমান হিদাইরখাল নদীতে বাঁধ দেওয়া মানে নদীকে হত্যা করা। যাঁরা এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে নদী হত্যার অভিযোগে বিচার হওয়া উচিত। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী কাজ হচ্ছে পরিবেশ-প্রকৃতি ধ্বংস করা।’

যেকোনো নির্বাচনে নদীখেকো ও পরিবেশ ধ্বংসকারী প্রার্থীদের বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে বাপা সভাপতি বলেন, সরকার নদীখেকো ও ধ্বংসকারীদের তালিকা তৈরি করেছে। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক বরং নানাভাবে তাঁদের প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। নদীখেকোদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স নীতির কথা বলেছেন। কিন্তু কিছু দুষ্ট লোকের লোভের কারণে এর প্রতিফলন দেখা যায় না। নদী ও পরিবেশ ধ্বংসের অপকর্মে যাঁরা লিপ্ত, তাঁরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

গণজমায়েতে প্রধান আলোচকের বক্তব্য দেন বাপার সাধারণ সম্পাদক ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল।

তিনি বলেন, হিদাইরখাল নদীতে দেওয়া বাঁধ অপসারণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করা হলেও এ বাঁধ অপসারণ করা হয়নি। উল্টো বর্তমানে আটলিহাই-নাইন্দা সড়ক প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁধটি পাকাকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের ব্যক্তিস্বার্থে নির্মিত এ বাঁধ অবিলম্বে অপসারণ করে সেখানে একটি সেতু নির্মাণ করতে হবে।

কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন দরবস্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাহারুল আলম। সঞ্চালনা করেন সারী নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবদুল হাই আল হাদী। স্বাগত বক্তব্য দেন সারী নদী বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুল আলম ও বাঁধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সোহেল আহমদ।

বক্তারা বলেন, অপরিকল্পিত হিদাইরখাল বাঁধের কারণে উত্তর-পূর্ব সিলেটের প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশ ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়েছে। এ বাঁধের কারণে শুধু কৃষি আবাদ কিংবা যাতায়াতব্যবস্থাই ধ্বংস হচ্ছে না, পুরো এলাকা মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। আশপাশের শতাধিক গ্রামের অসংখ্য রাস্তা, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি রক্ষা করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।

বক্তারা আরও বলেন, উত্তর-পূর্ব সিলেটের পানির মূল প্রবাহ হচ্ছে সারী, ডাউকি ও পিয়াইন নদী। ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ি পানি এসব নদী দিয়েই প্রবাহিত হয়। সাধারণত পাহাড়ি ঢল এলে ঘণ্টা দুয়েক বা দু-এক দিনের মধ্যে পানি নেমে যেত। কিন্তু হিদাইরখাল বাঁধ তৈরির ফলে এখন সেই পানি নামতে সময় অনেক বেশি লাগছে।

গণজমায়েতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল আহমদ, বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল, বাপা সিলেটের কোষাধ্যক্ষ ছামির মাহমুদ ও বাপার কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফাদার যোসেফ গোমেজ, গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান, শিক্ষাবিদ মনোজ কুমার সেন ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ফয়জুল্লাহ।