নোয়াখালীতে সংসদ সদস্যের সমাবেশের জন্য ৩৫০ বাস ভাড়া, ভোগান্তি

সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ডাকা প্রতিবাদ সমাবেশের জন্য ৩৫০টি বাস ভাড়া নেওয়ায় ফাঁকা পরিবহন কাউন্টার। শনিবার দুপুরে সুধারাম থানার সামনে
ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালী-৪ (সুবর্ণচর-সদর) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর ডাকা প্রতিবাদ সমাবেশ ঘিরে জেলা শহর থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ আছে। আজ শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলার সোনাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী কোনো যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে যায়নি। পাশাপাশি আন্তজেলা লোকাল বাস সার্ভিসের বাসও বন্ধ ছিল। পরিবহন মালিক পক্ষ বলছে, সন্ধ্যার পর বাস চলাচল স্বাভাবিক হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির নেতাদের কটূক্তির প্রতিবাদে সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। বেলা তিনটায় শহরের আব্দুল মালেক উকিল সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরু হয়েছে।

তবে সংসদ সদস্যের এই সমাবেশের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি এমপির ব্যক্তিগত মিটিং। এর সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।’

এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল কলেও তিনি সাড়া দেননি।

পরিবহন মালিক পক্ষ জানিয়েছে, সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর সমাবেশের জন্য ৩৫০টি বাস ভাড়া নেওয়া হয়েছে। এ কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা রুটে যেসব বাস চলাচল করত, সেগুলো আজ বন্ধ আছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম অভিমুখী অনেক যাত্রী সকাল থেকে সীমাহীন ভোগান্তির মুখে পড়েন। আকস্মিকভাবে জেলায় চলাচলকারী সব বাস বন্ধ রাখার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।

সকালে একাধিক যাত্রীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর সরেজমিনে শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড ও সুধারাম থানার সামনে বিভিন্ন পরিবহনের টিকিট কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক কাউন্টার বন্ধ। খোঁজ নিলে একাধিক কাউন্টারের ব্যবস্থাপক বলেন, সংসদ সদস্যের সমাবেশের জন্য সব বাস ভাড়া নেওয়া হয়েছে। তাই আজ নিয়মিত বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সন্ধ্যার পর পুনরায় বাস চালু হতে পারে।

ঢাকায় মেয়ের চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য নোয়াখালী-ঢাকা রুটে চলাচলকারী লাল সবুজ পরিবহনের ভোরের একটি টিকিট কেটেছিলেন শহরের ল’ইয়ার্স কলোনির বাসিন্দা ফরহাদ কিসলু। গতকাল রাতে কাউন্টার থেকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়—গাড়ি যাবে না, সব গাড়ি সমাবেশের জন্য ভাড়া নিয়ে নেওয়া হয়েছে। এতে তিনি খুবই ঝামেলায় পড়েন। পরে অনেক কষ্ট করে ট্রেনের দুটি টিকিট সংগ্রহ করে মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় রওনা হন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশে তিনি সুধারাম থানার সামনে বাস কাউন্টারে যান। কাউন্টার থেকে তাঁকে জানানো হয়, বাস চলাচল বন্ধ আছে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকার পরেও তিনি ঢাকায় যেতে পারেননি।

লাল সবুজ পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক নাজিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শুধু তাঁদের পরিবহনেরই নয়, নোয়াখালী থেকে চলাচলকারী অন্যান্য পরিবহন মিলিয়ে প্রায় ৩৫০টি বাস আওয়ামী লীগের সমাবেশে লোক আনা-নেওয়ার জন্য ভাড়া নেওয়া হয়েছে। আজ সকাল থেকে নোয়াখালীর সোনাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে কোনো বাস কোনো রুটে ছেড়ে যায়নি। তবে সন্ধ্যার পর বাস চলাচল আবার চালু হতে পারে বলে তিনি জানান।