‘কসমেটিকের জায়গায় আমার নাতনিকে তারা কাফনের কাপড় দিল’

৯ বছরের শিশু জোনাকির লাশ উদ্ধারের পর নানা সুরুজ মিয়ার আহাজারি। আজ মঙ্গলবার যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গের সামনেছবি: প্রথম আলো

যশোরে নিখোঁজ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর মর্জিনা আক্তার (জোনাকি) নামে ৯ বছরের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকালে যশোর শহরের রেলগেট এলাকার একটি ডোবা থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়।

জোনাকি যশোরের বেনাপোল এলাকার শাহিনুর তরফদারের মেয়ে। বেনাপোলে নানাবাড়িতে থেকে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করত জোনাকি। ছয় দিন সে আগে যশোর শহরের রেলগেট এলাকায় বাবার ভাড়া বাড়িতে বেড়াতে আসে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জোনাকির বাবার সঙ্গে মা কহিনুরের বিচ্ছেদ হয়েছে। মা বিদেশে চলে গেছেন। অটোরিকশাচালক বাবা শাহিনুর রেলগেট এলাকার নার্গিস নামের আরেক নারীকে বিয়ে করেন। লাশ উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি পুলিশ শাহিনুর তরফদার ও নার্গিস বেগমকে হেফাজতে নিয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিনের জন্য প্রসাধনসামগ্রী কিনতে গত বুধবার জোনাকি বেনাপোলের নানাবাড়ি থেকে যশোর শহরের রেলগেট এলাকায় বাবার কাছে বেড়াতে আসে। গতকাল সোমবার সকালে বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে জোনাকি নিখোঁজ হয়। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। ফেসবুকেও জোনাকির নিখোঁজ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। নিখোঁজের ২৪ ঘণ্টা পর আজ সকালে বাড়ির পাশের একটি ডোবা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

নিহত জোনাকির নানা সুরুজ মিয়া বলেন, শাহীনুর-কহিনুর দম্পতির জোনাকি ছাড়াও দুই ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তিন ভাই–বোন তাঁর কাছেই মানুষ হয়। মাঝেমধ্যে নাতি-নাতনিরা রেলগেট এলাকার তাদের বাবা ও সৎমায়ের কাছে বেড়াতে যায়। শুক্রবার জোনাকিকে কসমেটিক কিনে দেওয়ার নাম করে তার সৎমা নার্গিস যশোরের বাসায় বেড়াতে নিয়ে আসেন। সোমবার সকাল ১০টা থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। পরে আজ দুপুরে বাবার বাসার পাশে পরিত্যক্ত পুকুর থেকে জোনাকির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, ‘কসমেটিকের জায়গায় আমার নাতনিকে তারা কাফনের কাপড় দিল।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক মফিজুর রহমান বলেন, জোনাকিকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কি না, সেটা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। লাশের হাত ও পায়ে জখমের চিহ্ন রয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালে শাহিনুর যখন বাড়ি থেকে বের হন, তখন তাঁর সঙ্গে স্ত্রী নার্গিস ও মেয়ে জোনাকিও বের হয়। বাড়ির পাশে জোনাকিকে খেলতে দিয়ে আসেন তার সৎমা নার্গিস। এর পর থেকে সে আর বাড়িতে ফেরেনি। বিকেলে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। খোঁজাখুঁজির পর আজ সকালে পুলিশ তার লাশ একটি ডোবা থেকে উদ্ধার করেছে। কে বা কারা হত্যা করেছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

জোনাকির ভাই তাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার থেকে জোনাকিকে পাওয়া যাচ্ছে না। সৎমা আমাদের জানিয়েছিল পাশেই স্টেশন; সেই স্টেশনে খুলনার ট্রেনে উঠে যেতে পারে। আমরা খুলনাতেও খুঁজেছি। যশোরে থানাতে জিডি করেছি। এমনকি শহরে মাইকিং করে আমার বোনকে খুঁজেছি। আজ আমার বাবা ও সৎমা যেখানে থাকে; সেই বাসার পেছনের একটি পরিত্যক্ত পুকুরে জোনাকির মরদেহ খুঁজে পাওয়া গেছে। সৎমা নার্গিস আমার বোনকে হত্যা করতে পারে বলে আমাদের সন্দেহ।’

এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, জোনাকি নিখোঁজের ঘটনায় সোমবার থানায় জিডি করা হয়। আজ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।