কেন বাস চালাচ্ছিস, বলেই ভাঙচুর গণপরিবহন

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাস থেকে টেনে নামানো হচ্ছে চালককে। পরিবহন শ্রমিকেরা রাসটি ভাঙচুর করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরের অক্সিজেন এলাকায়
সংগৃহীত

চট্টগ্রাম নগরে পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যে বাস চালানোয় আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি বাসে ভাঙচুর করা হয়েছে। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরের অক্সিজেন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাস্থল থেকে ভাঙচুরে জড়িত থাকার অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।

আটকের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা। তিনি বলেন, বিআরটিসির বাসটি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে ব্যবহৃত হয়। ধর্মঘটে বের হওয়ার কারণে বাসের সামনের কাচ ভাঙচুর করা হয়েছে। পরে তিনজনকে আটক করা হয়। বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ অভিযোগ জানালে আটক তিনজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা দুই যাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েকজন ব্যক্তি হঠাৎ এসে বাসে আঘাত করেন। ধর্মঘটে বাস কেন চালাচ্ছিস—এ কথা বলেই লাঠি দিয়ে কাচ ভেঙে দেন।’

চট্টগ্রামসহ পাঁচটি জেলায় আজ সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম নগর থেকে বিভিন্ন উপজেলা, কক্সবাজার জেলা, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার উদ্দেশে কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। ওই সব এলাকা থেকে কোনো বাসও আসছে না। জেলার শহর এলাকায়ও চলছে না গণপরিবহন। খোলার দিনের সকালে কর্মক্ষেত্রে যেতে হাজারো মানুষকে বেগ পেতে হয়েছে।

মূলত চারটি দাবিতে এ ধর্মঘট পালন করছেন গণপরিবহনের মালিক ও শ্রমিকেরা। গণপরিবহন মালিক ও শ্রমিকের বিরুদ্ধে দেওয়া মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তার মালিক-শ্রমিকের মুক্তি, সড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করা, বিভিন্ন জায়গায় বাস আটকে রাখার প্রতিবাদ ও চুয়েটে পুড়িয়ে দেওয়া তিনটি বাসের ক্ষতিপূরণের দাবিতে ধর্মঘট চলছে। গতকাল শনিবার মালিক ও শ্রমিকের যৌথ সভায় এসব দাবি তুলে ধরা হয়।

দুর্ভোগে চুয়েটের ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা

পরিবহন মালিক এবং শ্রমিকদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যেই আজ থেকে শুরু হয়েছে সমন্বিত প্রকৌশল গুচ্ছের ভর্তি কার্যক্রম। চট্টগ্রামে গণপরিবহন ধর্মঘটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন চুয়েটে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীরা। গণপরিবহন না থাকায় সড়কে বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়েছে তাঁদের।

কুমিল্লা থেকে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণপরিবহন না থাকায় আমাদের কিছুটা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে৷ গণপরিবহন না থাকায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সিএনজি করে এসেছি। এতে আমাদের বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে। সেই সঙ্গে সময়ও বেশি লেগেছে।’

আরেক শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব বলেন, ‘গণপরিবহন ধর্মঘটের বিষয়ে জানতে পেরে চুয়েটে ঠিকঠাক পৌঁছাতে পারব কি না তা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। তবে চুয়েট প্রশাসন আমাদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করে দেওয়ায় কোনো সমস্যা ছাড়া নির্বিঘ্নে আমরা আসতে পেরেছি।’

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ক কমিটির সভাপতি চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সুদীপ কুমার পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভর্তি কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চলছে। ধর্মঘটের কথা মাথায় রেখে আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি বাসের ব্যবস্থা করেছিলাম। কোনো শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়ে আমাদের জানালে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করব।’

গত সোমবার বেলা সাড়ে তিনটায় মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে বাসের ধাক্কায় নিহত হন চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা (২২) ও দ্বিতীয় বর্ষের তৌফিক হোসাইন (২১) । আহত হন জাকারিয়া হিমু (২১)। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে চার দিন আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন চলাকালীন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আগুন দেন শাহ আমানত পরিবহনের তিনটি বাসে। এরপর বাস ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার প্রতিবাদে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন গণপরিবহনের মালিক ও শ্রমিকেরা।