সেতু নির্মাণের দেড় বছরেও হয়নি সংযোগ সড়ক, বাঁশের সাঁকোয় ওঠানামা

মূল সড়ক থেকে এ সেতুর উচ্চতা প্রায় ১২ ফুট। সেতুতে ওঠানামার জন্য বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন স্থানীয় লোকজন।

নওগাঁর মান্দা উপজেলার জোতবাজার এলাকায় নির্মিত সেতুর সংযোগ সড়ক হয়নি দেড় বছরেও। ওঠানামার জন্য বাঁশের সাঁকো করেছেন স্থানীয় লোকজনগত বুধবার।প্রথম আলো

নওগাঁর মান্দা উপজেলায় আত্রাই নদের ওপর জোতবাজার এলাকায় সেতু নির্মাণের দেড় বছরের পরও দুই দিকে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। এ অবস্থায় ছয় ইউনিয়নের মানুষ চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। স্থানীয় লোকজন নিজেদের উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে কোনো রকমে যাতায়াত করছেন।

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, নদের দুই পাশে তীর ও মূল সড়ক থেকে সেতুটির উচ্চতা প্রায় ১২ ফুট। সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় লোকজন সেতুতে ওঠার জন্য সেতুর দুই পাশের মূল সড়ক থেকে কিছু অংশে মাটি দিয়ে ভরাট করে অস্থায়ী সড়ক নির্মাণ করেছেন এবং সেতুতে ওঠা-নামার জন্য বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছে। এ সাঁকো দিয়ে কোনো রকমে বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে। অধিকাংশ মানুষ হেঁটে চলাচল করছেন।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দেখা যায়, সাঁকো দিয়ে খুব সাবধানে মোটরসাইকেল নিয়ে দুই তরুণ সেতু নিচে নামছেন। এক তরুণ মোটরসাইকেলের চালকের আসনে বসে চালাচ্ছেন, আরেকজন মোটরসাইকেলটি সাঁকো থেকে যাতে পড়ে না যায়, সে জন্য মোটরসাইকেলটি পেছন থেকে ধরে আছেন। সাঁকো থেকে নামার পর মোটরসাইকেলটির পেছনে ধরে থাকা ওই তরুণ মোটরসাইকেলটিতে উঠে বসেন। 

কথা বলে জানা যায়, উপজেলার নুরাল্যাবাদ, কালিকাপুর, বিষ্ণুপুর, প্রসাদপুর, মৈনম ও গণেশপুর ইউনিয়নের অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ এ পথ দিয়ে চলাচল করেন। 

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেতুটির উত্তর পাশে উপজেলার নুরাল্যাবাদ, কালিকাপুর ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন এবং দক্ষিণ পাশে প্রসাদপুর, গণেশপুর ও মৈনম ইউনিয়ন। সেতুটির সংযোগ সড়ক হয়ে গেলে নদীর উত্তর পারের লোকজনের জোতবাজারে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে সুবিধা হবে। এ ছাড়া জোতবাজারে নুরাল্যাবাদ উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ, জোতবাজার মহিলা কলেজ এবং জোতবাজার বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। নদীর উত্তর পারের বিভিন্ন গ্রামের শিক্ষার্থীরা এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। 

অন্যদিকে নদের দক্ষিণপাড়ের লোকজনের মান্দা উপজেলা সদর, সতিহাট বাজার এবং নওগাঁ জেলা শহরে চলাচল করতে সুবিধা হবে। মান্দা উপজেলা ও জেলা শহরে চলাচলে রাস্তার দূরত্ব অন্তত ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার কমে যাবে।

কাঞ্চন গ্রামের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম বলেন, সেতু নির্মাণের সময় খেয়াঘাটে যাতায়াতের রাস্তা কেটে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এখন নদীর পারাপারের জন্য খেয়াঘাটে যেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে সেতুটিতে উঠে নদী পারাপার হচ্ছেন। জোতবাজার হাটে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে যেতে হলে এখনো নৌকায় করেই যাতায়াত করতে হচ্ছে।

জোতবাজার মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী রুবিনা আক্তার বলে, ‘বাঁধের সড়ক থেকে সেতুর উচ্চতা অনেক। বাঁশের সাঁকোতে করে সেতুতে উঠতে ভয় লাগে। হেঁটে সেতু পার হতে প্রায় ১০ মিনিট সময় লাগে। অথচ সংযোগ সড়ক থাকলে ভ্যানে চড়ে সেতু পার হতে দুই মিনিটও লাগত না।’ 

সেতুসংলগ্ন বাইবুল্যা গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য আয়েদ আলী বলেন, আত্রাই নদের বাঁ (দক্ষিণ) ও ডান (উত্তর) তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ থেকে সেতু পর্যন্ত একটি সংযোগ সড়ক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেতুটির নির্মাণ শেষ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংযোগ সড়কের কাজ না করেই চলে গেছে। সংযোগ না হওয়ায় দেড় বছরে ধরে সেতুটি কোনো কাজে আসছে না।  

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মান্দা উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আত্রাই নদের জোতবাজার খেয়াঘাটে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল। এর দৈর্ঘ্য ২১৭ মিটার ও প্রস্থ ৭ দশমিক ৩২ মিটার। এতে ব্যয় হয়েছে ১৮ কোটি ৮১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে সেতুটির মূল কাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মিলন ট্রেডার্স। একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য চুক্তিবদ্ধ থাকলেও নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার অজুহাতে সংযোগ সড়ক না করে তারা কাজ গুটিয়ে নেয়।  

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মিলন ট্রেডার্সের মালিক দেওয়ান সেকার আহমেদ বলেন, ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করা হয়েছে। এলজিইডির কাছে তাঁরা সংযোগ সংযোগ নির্মাণের বাজেট বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু এলজিইডি সেটা করতে রাজি হয়নি। আগের চুক্তিতে শুধু মাটি ফেলে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু এই সংযোগ সড়কটি শুধু মাটি ফেলে নির্মাণ করা যাবে না। সড়কটি সাধারণভাবে নির্মাণ করা হলে বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানিতে দুই ধার ধসে যাবে। নতুন দর দিলে ব্লক দিয়ে সংযোগ সড়কের কাজ করা যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডি নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আগের নকশায় একটু সমস্যা আছে। আর মাটি দিয়ে কাজ করলে সংযোগ সড়ক টিকবে না। তাই ব্লক দিয়ে এটি নির্মাণ করতে হবে। সংযোগ নির্মাণের জন্য নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হবে। সেই কাজ চলছে।