সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত শান্তিরক্ষী জাহাঙ্গীরের বাড়িতে মাতম
সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘের ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় নিহত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর একজন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (৩০)। তাঁর গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় চলছে স্বজনদের আহাজারি। মিশনে যাওয়ার মাত্র এক মাসের মাথায় জাহাঙ্গীরের এমন করুণ মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
গতকাল শনিবার রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশি ছয়জন নিহত হওয়ার তথ্য জানানো হয়। এই হামলায় আরও আট শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। হতাহতদের সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। তাঁরা আবেইর জন্য জাতিসংঘের অন্তর্বর্তী নিরাপত্তা বাহিনীতে (ইউএনআইএসএফএ) কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
এ হামলায় নিহত জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি উপজেলার জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামে। তাঁর স্ত্রী ও তিন বছর বয়সের একটি শিশুসন্তান রয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনদের আহাজারিতে পুরো গ্রামে শোকাবহ অবস্থা। স্থানীয় লোকজন বাড়িতে এসে ভিড় করছেন। বাড়ির ভেতরে দেখা যায়, ছোট একটি টিনের ঘরে নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী আহাজারি করছেন। এই ঘরেই তাঁরা পরিবারসহ বসবাস করেন।
বাড়ির উঠানে বসে জাহাঙ্গীরের বাবা হজরত আলী কেঁদে কেঁদে লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন। মা পালিমা বেগম ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়ে কান্না করছেন। আর স্ত্রী রুবাইয়া আক্তার স্বামীর মৃত্যুর খবরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। স্বজনেরা তাঁকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। পাশেই তিন বছর বয়সী ছোট্ট শিশু ইরফান মায়ের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মেস ওয়েটার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ৭ নভেম্বর তিনি শান্তি রক্ষা মিশনে অংশ নিতে সুদানে যান। মিশনে যাওয়ার মাত্র এক মাস সাত দিনের মাথায় তাঁর মৃত্যুর খবরে পুরো পরিবার হতভম্ব হয়ে পড়েছে।
নিহত জাহাঙ্গীরের বাবা হজরত আলী বলেন, তাঁর তিন সন্তানের মধ্যে জাহাঙ্গীর দ্বিতীয় সন্তান। শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে সৌদি আরবে থাকা তাঁর বড় ছেলের কাছ থেকে সন্তান মারা যাওয়ার খবর পান। আজ সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রংপুর ক্যান্টমেন্ট থেকে একজন মুঠোফোনের মাধ্যমে তাঁকে ছেলের মৃত্যুর সংবাদটি নিশ্চিত করেন।
জাহাঙ্গীরের শ্যালক মো. ওয়ালী উল্লাহ বলেন, তাঁর ভগ্নিপতির অকালমৃত্যুতে পরিবারের শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মাত্র পাঁচ বছরের সংসারজীবনে তাঁদের তিন বছরের একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। বোনকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষাই তাঁরা খুঁজে পাচ্ছেন না। তাঁর দাবি, ভগ্নিপতির লাশ যেন দ্রুত দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করে সরকার এবং অভাবগ্রস্ত এই পরিবারকে প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা প্রদান করারও অনুরোধ জানান তিনি।
পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও রুপম দাস বলেন, তিনি খবর পেয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাদের বাড়িতে গিয়েও খোঁজখবর নিয়েছেন। নিহত মরদেহ দেশে আনাসহ সরকারিভাবে যা সহযোগিতা করা যায়, তাঁরা এসবের ব্যবস্থা নেবেন।