সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে পাল্টাপাল্টি হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের অফিস সহকারী অবদুল হাই বাদী হয়ে ৫৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ১২০ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন। মামলার পর রাতে অভিযান চালিয়ে সাত নারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার নারীরা হলেন আবদুল্লাহ আল মামুনের স্ত্রী ঝর্ণা বেগম (২৬), মৃত আক্তার হোসেনের মেয়ে ফুল পরী (৫০), হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী ওজুফা বেগম (৪০), আনসপ আলীর স্ত্রী মালেকা বেগম (৪০), নজরুল ইসলামের স্ত্রী খুশি বেগম (৪০), জামাল হোসেনের স্ত্রী আখলিমা খাতুন (৫৫) ও আবদুল আলীমের স্ত্রী সফিয়া খাতুন (২৫)। তাঁদের সবার বাড়ি উপজেলার বলদিপাড়া-হলদিঘর গ্রামে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শাহজাদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর বলদিপাড়া-হলদিঘর এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামিদের মধ্যে ওই সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তার আসামিদের আজ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বলদিপাড়া-হলদিঘর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আবদুল জলিল বলেন, ওই মাঠের পাশেই অনেক সরকারি জমি আছে। সেখানে প্রকল্পটি করা যেত। খেলার মাঠ বন্ধ করে কেন প্রকল্প করতে হবে? এ ঘটনায় সংঘর্ষ খুবই দুঃখজনক। একটি ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠ রক্ষা করতে অন্য সবার সঙ্গে গ্রামের নারীরা এগিয়ে এসেছেন, প্রতিবাদ করেছেন। এ জন্য তাঁদের নামে মামলা হবে, কারাগারে যেতে হবে। এমনটি মোটেই কাম্য নয়।
সোমবার সকালে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামটি পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রামের প্রধান সড়কের পাশে বেশ কয়েকটি বাড়ির ফটক ভাঙা। এ বিষয়ে গ্রামের নারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার গভীর রাতে পুলিশ এসে বাড়ির ফটক ভেঙে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে।
গ্রেপ্তার ওজুফার মা জহুরা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘তিন বছরের বাচ্চাকে ফেলে রাতের অন্ধকারে আমার মেয়েকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেছে পুলিশ। আমার মেয়ের কী অপরাধ ছিল। আমি অসুস্থ, মায়ের জন্য শিশু মরিয়ম কান্না করছে। এখন আমি কী করব?’
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকালে বলদিপাড়া-হলদিঘর গ্রামের শতবর্ষী ওই মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্প স্থাপনে বালু ফেলা কার্যক্রম পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান। খবর পেয়ে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ান এবং বাঁশ দিয়ে পথ আটকান। এ অবস্থায় ইউএনও ও সহকারী কমিশনার বালুর ট্রাক নিয়ে এলে গ্রামবাসী বাধা দেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে গ্রামবাসীর বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে প্রশাসনের লোকজনের হাতে সুমাইয়া নামের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী আহত হয়। এতে স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে ইটপাটকেল ছুড়লে সহকারী কমিশনার লিয়াকত সালমান আহত হন। ভাঙচুর হয়েছে ইউএনওর গাড়ি। এ সময় প্রশাসনের লোকজন, পুলিশ, গ্রাম পুলিশ ও আনসার সদস্যরা মিলে গ্রামবাসীকে লাঠিপেটা করেন। এতে গ্রামের ৯ জন বাসিন্দা আহত হন।
ওই গ্রামের শওকত আলীর স্ত্রী মনিজা খাতুন (৪০) প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সময় প্রশাসনের লোকজনের সঙ্গে পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশের সদস্যরা ছিলেন। ইউএনওর কথা বলার একপর্যায়ে ওজুফা খাতুন নামের এক নারী কিছু বলার চেষ্টা করলে সহকারী কমিশনার তাঁকে সড়ক থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন।
ইউএনও তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বলদিপাড়া-হলদিঘর গ্রামে দুটি মাঠ আছে। একটি মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্প করা নিয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। সম্প্রতি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে সমঝোতা হয়, স্কুলের পাশের মাঠটি সংস্কার করে খেলাধুলার জন্য দেওয়া হবে। আর যে মাঠটি নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে, সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রোববার সেখানে কাজ শুরু হওয়ার কথা। সেই অনুযায়ী তাঁরা মাঠটি পরিদর্শনে গেলে গ্রামবাসী বাধা দেন। একপর্যায়ে তাঁরা সহকারী কমিশনারের মাথায় আঘাত করেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।