জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল শেরপুরের তুলসীমালা ধান

শেরপুরে উৎপাদিত ঐতিহ্যবাহী তুলসীমালা ধান
ছবি: প্রথম আলো

শেরপুর জেলার অন্যতম ঐতিহ্য তুলসীমালা সুগন্ধি চাল। এ চালের পিঠা-পায়েস, খই-মুড়ি, ভাতের সুগন্ধ ও স্বাদ অসাধারণ। ‘পর্যটনের আনন্দে, তুলসীমালার সুগন্ধে’ স্লোগান সামনে রেখে শেরপুর জেলা প্রশাসন এটিকে জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। তুলসীমালা ধান থেকে এই চাল উৎপাদন হয়।

জেলা প্রশাসনের আবেদনক্রমে শিল্প মন্ত্রণালয় তুলসীমালা ধানকে ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (জিআই) মো. জিল্লুর রহমান স্বাক্ষরিত গত বৃহস্পতিবারের চিঠিতে তুলসীমালা ধানকে জিআই পণ্য হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, তুলসীমালা ধান থেকে উৎপাদিত তুলসীমালা চাল শেরপুরের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। দেশের সব জেলাসহ সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে এই চাল বিদেশে রপ্তানি করা সহজ হবে। এর মাধ্যমে অর্জিত হবে বৈদেশিক মুদ্রা। 

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ববিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড প্রপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) এই স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে।

যাঁরা জিআইয়ের জন্য আবেদন করেন, তাঁদেরই দেওয়া হয় মেধাস্বত্ব। চাইলেই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া যায় না। বেশ কিছু প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। আবেদনকারী কর্তৃপক্ষ বা ব্যক্তিকে কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি যে মৌলিকভাবে শুধু বাংলাদেশেই হয়, তার প্রমাণ দিতে হয়। ডিপিডিটির একটি কমিটি তা মূল্যায়ন করে ওই স্বীকৃতি দেয়। এরপর সংস্থাটির জার্নালে তা প্রকাশ করা হয়। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও জেলা চালকল মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, তুলসীমালা ধান আমন মৌসুমে উৎপাদিত হয়ে থাকে। জেলার সদর, নালিতাবাড়ী, নকলা, শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে এ ধানের আবাদ করা হয়। জেলার অর্ধশত স্বয়ংক্রিয় চালকলে তুলসীমালা চাল উৎপাদন করা হয়। প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন চাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ এবং বিদেশে রপ্তানি করা হয়। 

তুলসীমালা চাল চিকন ও সুগন্ধি; যেটি শেরপুর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করা হয়। উচ্চ গুণসম্পন্ন তুলসীমালা চাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ। ঈদ, পূজা–পার্বণ, বিয়ে, বউভাতসহ বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে পোলাও, বিরিয়ানি ও মিষ্টান্ন তৈরিতে এ চালের জুড়ি নেই। 

এদিকে শহরের নয়আনী বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ী সাকিবুল ইসলাম বলেন, প্রতি কেজি তুলসীমালা চাল ১১০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। 

শুধু চালকলের মালিকেরা নয়, অনলাইন বা ই-কমার্সের মাধ্যমেও তরুণ উদ্যোক্তারা দেশের বিভিন্ন জেলায় তুলসীমালা চাল বিক্রি ও সরবরাহ করছেন। তাঁদের একজন হলেন শেরপুর শহরের নবীনগর এলাকার মনজিলা মিরা। ২০২০ সালের জুন মাসে করোনাকালে তিনি ‘তুলসীমালা এক্সপ্রেস’ নামের ফেসবুক ভিত্তিক একটি গ্রুপ খোলেন। এরপর তিন বছর অনলাইনে অর্ডার নিয়ে ভোক্তাদের কাছে তুলসীমালা চাল পৌঁছে দিচ্ছেন।

মনজিলা মিরা বলেন, ‘শেরপুর জেলার ব্র্যান্ডিং নির্ধারণ করা হয় পর্যটন খাত এবং একটি ধানের নামে, যে ধানের নাম তুলসীমালা। জেলা প্রশাসন থেকে এর প্রচার এবং প্রসারের ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়, যেন আমাদের পর্যটন খাত এবং তুলসীমালা চাল দেশবাসীর কাছে পরিচিতি পায়। সরকার তুলসীমালা ধানকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এটি আমাদের জন্য গর্বের।’ 

জেলা চালকল মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন বলেন, কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তুলসীমালা চাল বিদেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। প্রতিবছর জেলায় প্রায় ১০০ কোটি টাকার তুলসীমালা চাল বেচাকেনা হয়।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শেরপুরের উপপরিচালক সুকল্প দাস বলেন, জেলা প্রশাসকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং কৃষি বিভাগের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে তুলসীমালা ধান জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ভবিষ্যতে এই চাল বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।