হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা চলছে। এ উৎসবে ‘মহানবমীতে’ আনন্দ হয় বেশি। মণ্ডপে মণ্ডপে পরিবার–পরিজন নিয়ে এদিন ঘুরে বেড়ায় লোকজন। কিন্তু সুনামগঞ্জে মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় সেই আনন্দে ভাটা পড়েছে।
সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় গ্রিডে সমস্যা দেখা দেওয়ায় মঙ্গলবার বেলা দুইটা থেকে সারা দেশের মতো বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে জেলাটি।
আজ সন্ধ্যায় জেলা শহরের কয়েকটি পূজা মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, লোকজনের উপস্থিতি কম। কোনো কোনো মণ্ডপে জেনারেটর আবার কোনো মণ্ডপে মোমবাতি জ্বালিয়ে সারতে হচ্ছে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পৌর শহরের ষোলঘর রামকৃষ্ণ আশ্রমের পূজামণ্ডপে গিয়ে দেখা যায়, মোমবাতি জ্বালিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা চলছে। মণ্ডপে মোমবাতি থাকলেও আশপাশ অন্ধকার। লোকজন অন্ধকারেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে আছে।
সেখানে কথা হয় সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ পরিমল কান্তি দের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দুপুর থেকেই বিদ্যুৎ নেই। শুনেছি, জাতীয় গ্রিডে সমস্যা হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় লোকজন বের হয়েছে কম। আবার আমাদের মণ্ডপে যে জেনারেটর ছিল, সেটিতে সমস্যা থাকায় চালানো যাচ্ছে না।’ স্বপন রায় নামের পূজা আয়োজক কমিটির আরেক সদস্য বলেন, আজ তো আনন্দ বেশি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় সেটা হয়নি।
এ মণ্ডপেই কথা হয় জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বিমান কান্তি রায়ের সঙ্গে। তিনি জানান, জেলায় ৪২০টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। এর মধ্যে জেলা শহরে আছে ২৬টি। শহরে বিভিন্ন মণ্ডপে জেনারেটর থাকলেও গ্রামের অনেক মণ্ডপে সে ব্যবস্থা নেই। তাই মোমবাতি, চার্জ লাইট দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা সারতে হচ্ছে। পূজা উদ্যাপন পরিষদের এই নেতা বলেন, প্রশাসন ও বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় প্রতিটি মণ্ডপে নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
শহরের ষোলঘর এলাকার নবারুণ পূজা উদ্যাপন কমিটির মণ্ডপ, হাসননগর এলাকার দুর্গাবাড়ি, উকিলপাড়া, নতুনপাড়া, নবীনগর এলাকার আরও কয়েকটি পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মহানবমীতে রাস্তাঘাট ও মণ্ডপে অন্যান্য বছর মানুষের যে ভিড় দেখা যেত, বিদ্যুৎ না থাকায় এবার সেটা কম।
উকিলপাড়া পূজা কমিটির উপদেষ্টা বিধান চন্দ্র দাস বলেন, যেহেতু সমস্যাটা জাতীয়ভাবে হয়েছে। তাই মেনে নিতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ থাকলে আজকের সন্ধ্যাটা আরও আনন্দময় হতো।
রাত পৌনে আটটার দিকে শহরের পৌর বিপণি এলাকায় বিদ্যুৎ চালু হয়। তবে এ প্রতিবেদন লেখার সময় রাত পৌনে ১০টার দিকেও শহরের অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না।
সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় গ্রিডে সমস্যা হওয়ায় সুনামগঞ্জ মঙ্গলবার বেলা দুইটা থেকে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। তাঁরা মাইকিং করে বিষয়টি গ্রাহকদের অবহিত করেছেন। পৌনে আটটা থেকে শহরের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে। যে বিদ্যুৎ তাঁরা পেয়েছেন, তাতে পুরো শহরে দেওয়া সম্ভব নয়।