হোটেলমালিক নেতার সাক্ষাৎকার
স্থানীয় নেতৃত্ব উন্নয়নে আন্তরিক নয় বলে কুয়াকাটা পিছিয়ে আছে
কুয়াকাটা দেশের অন্যতম একটি পর্যটনকেন্দ্র। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার এই স্থান পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বেশ পিছিয়ে আছে। কুয়াকাটার পর্যটনের বর্তমান পরিস্থিতি এবং এর সামগ্রিক উন্নয়নে কী করা যায়—এসব নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও হোটেল ব্যবসায়ী আবদুল মোতালেব শরীফের সঙ্গে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: কক্সবাজারের চেয়ে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা পিছিয়ে কেন?
আবদুল মোতালেব শরীফ: কক্সবাজারে দেশি উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ বেশি। তা ছাড়া কক্সবাজারে পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ীরা সব সময় সরকারের সহায়তা পেয়ে আসছে। আমি মনে করি, স্থানীয় নেতৃত্ব কুয়াকাটার উন্নয়নে আন্তরিক নয়। যে কারণে কুয়াকাটা সব দিক থেকে পিছিয়ে আছে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: কুয়াকাটায় পর্যটক বেড়েছে। এর কারণ কী হতে পারে?
আবদুল মোতালেব শরীফ: কুয়াকাটার প্রতি মানুষের আকর্ষণ আছে। কুয়াকাটাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের জলরাশি, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, ফাতরার চর, চর বিজয়সহ ঘুরে বেড়ানোর মতো আকর্ষণীয় স্পটগুলো ভ্রমণবিলাসী মানুষকে কুয়াকাটায় টেনে আনে। এখানকার নিরাপত্তা, স্থানীয় লোকজনের আতিথেয়তাও পর্যটক বাড়ার পেছনে কাজ করছে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার এবং সেন্টমার্টিনের দূরত্ব অনেক বেশি। যেতেও সময় লাগে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় ৫-৬ ঘণ্টায় পৌঁছানো যায়। এসব কারণে কুয়াকাটায় পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: কুয়াকাটায় পর্যটকদের থাকার জায়গার ঘাটতি আছে। এ নিয়ে আপনারা কী ভাবছেন?
আবদুল মোতালেব শরীফ: এটা ঠিক বলেছেন। বর্তমানে ১৭০টির মতো আবাসিক হোটেল-মোটেল আছে। তাতে ১৫–২০ হাজার মানুষের থাকার ধারণক্ষমতা আছে। নতুন উদ্যোক্তা বা বিনিয়োগকারীরা হোটেল-মোটেল করতে আগ্রহী হয়েছেন। তবে এ জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে জমি বিক্রির ওপর ‘নিষেধাজ্ঞা’। এখন জমি কেনা-বেচা করতে হলে ‘অনুমতি’ নিতে হয়। তবে সে প্রক্রিয়া খুব জটিল। আমাদের আবেদন থাকবে, জমি বিক্রির অনুমতি আরও সহজ এবং দ্রুত করতে হবে। এতে কুয়াকাটায় নতুন বিনিয়োগের পথ যেমন সহজ হবে, তেমনি দ্রুত হোটেল-মোটেলসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো গড়ে উঠবে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: এবার কী পরিমাণ পর্যটক হয়েছে কুয়াকাটায়?
আবদুল মোতালেব শরীফ: আগে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো ছিল না। তখন বন্ধের দিনসহ বিশেষ দিনে সর্বসাকল্যে ২০-২৫ হাজার পর্যটকের আগমন ঘটত। এখন যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় বন্ধের দিনসহ বিশেষ দিনে ৪০-৫০ হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে থাকে। তবে গত দুই সপ্তাহে পর্যটক আগমনের সংখ্যা ৮০ হাজার থেকে ১ লাখে পৌঁছেছে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: কুয়াকাটাকে নিয়ে ‘মাস্টার প্ল্যান’ করা হয়েছে বলে শুনেছি। এর কোনো অগ্রগতি আছে?
আবদুল মোতালেব শরীফ: আমরাও শুনছি, কিন্তু কোনো অগ্রগতি দেখছি না। মাস্টার প্ল্যান মানে আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম, হাসপাতাল, ওয়াচ টাওয়ার, বিমানবন্দর, বিনোদন পার্ক করার কথা বলা হয়েছে। এসব যদি বাস্তবায়ন হতো, তাহলে কুয়াকাটার চেহারাই বদলে যেত। আমাদের দাবি থাকবে, কুয়াকাটার সামগ্রিক উন্নতির জন্য অতি দ্রুত মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করা হোক।