অবৈধ অটোরিকশায় বাড়ছে দুর্ঘটনা

গত ১৫ মাসে অটোরিকশার সঙ্গে অন্য যানের সংঘর্ষে ৪৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সিএনজিচালিত অবৈধ অটোরিকশার চলাচল বাড়ছে। জেলায় সব মিলিয়ে ১২ হাজারের বেশি অটোরিকশা চলাচল করে। এর মধ্যে অধিকাংশেরই নিবন্ধন ও ফিটনেস নেই। এতে জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বাড়ছে। বিআরটিএ, হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিআরটিএ ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১২ হাজার ২৪৯টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। এর মধ্যে নিবন্ধিত অটোরিকশার সংখ্যা ৫ হাজার ২৪৯। আবার নিবন্ধিত অটোরিকশার মধ্যে ৩ হাজার ৫৯০টির ফিটনেস সনদ ও রুট পারমিট নেই। এ তিন চাকার যান অতিরিক্ত চলাচলের কারণেই ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট–বড় দুর্ঘটনা।

সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে ৪৩ জন মারা গেছেন। গত ১৯ মাসে অটোরিকশার জন্য সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার ৫০ দশমিক ৫৮। গত ১৬ থেকে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক অটোরিকশাচালক, দুই অটোরিকশার যাত্রীসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, যানবাহনের নিবন্ধন দেওয়ার দায়িত্বে থাকা বিআরটিএ এবং হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ যথাযথভাবে তদারকি না করায় সড়কগুলোয় অবৈধ অটোরিকশার সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।

বিআরটিএর ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, জেলায় আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৫ হাজার ২৪৯টি অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এরপর নতুন করে আর কোনো অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়ে বিআরটিএর সভায় সিদ্ধান্ত হয়নি। গত এপ্রিল মাসের পর বিআরটিএর আর কোনো সভা হয়নি।

সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে এখানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪৭ জন। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রাণ হারান ৩৮ জন এবং আহত হয়েছেন শতাধিক। এ সময় মোট দুর্ঘটনা ঘটেছে ৯৫টি। প্রতিটি দুর্ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হয়েছে।

মামলার বরাত দিয়ে হাইওয়ে পুলিশ জানায়, ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে। গত ডিসেম্বরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার ৯ আরোহী নিহত হন। গত মার্চে এ সড়কে আটটি দুর্ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়।

জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক দেবব্রত কর বলেন, ‘লাইসেন্স, ফিটনেস ও রুট পারমিটের বিষয় তদারকি করার জন্য আমরা অভিযান চালাচ্ছি। এসব ঘটনায় নিয়মিত মামলা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন পাঁচটি বা এর অধিক মামলা দেওয়া হয়।’

এদিকে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানায় বিভিন্ন পর্যায়ে ৫১টি পদ আছে। এর মধ্যে কর্মরত আছেন ৩৬ জন। অর্থাৎ এই থানায় ১৫টি পদ শূন্য।

সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি সুখেন্দু বসু বলেন, ‘মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ‌। এটি বন্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি‌।’ রুট পারমিট ও নিবন্ধন না থাকা সত্ত্বেও এসব যানবাহন কীভাবে মহাসড়কে চলছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিন বলেন, ‘আমাদের জনবলের সংকট রয়েছে। কারণ, আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত নির্মাণাধীন চার লেন সড়কের বিশ্বরোড থেকে জেলা শহর পর্যন্ত যান নিয়ন্ত্রণেই পুরো দিন চলে যায়‌। সেই সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনা ও মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধে অভিযান চালাতে হয়। তবে অভিযানে কাগজপত্র সঠিক না থাকলে অটোরিকশা জব্দ করা হয়।’