চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে ফের বিরোধ

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীছবি সংগৃহীত

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে আবার পুরোনো বিরোধ চাঙা হয়ে উঠেছে। সম্মেলনের আগে বিভিন্ন ওয়ার্ড, ইউনিট ও থানা কমিটির কমিটি গঠন প্রক্রিয়া, নতুন সদস্য সংগ্রহসহ নানা বিষয়ে এই মতবিরোধ তৈরি হয়। গত বৃহস্পতিবার দলের বর্ধিত সভায় এ নিয়ে দুই সাবেক ও বর্তমান সিটি মেয়র বাদানুবাদেও লিপ্ত হন।

সাবেক মেয়র ও দলের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং বর্তমান মেয়র ও যুগ্ম সম্পাদক মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে এই বিতণ্ডা হয়। দলের সম্মেলনসহ নানা ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ মূলত দুটি শিবিরে বিভক্ত।

এক পক্ষে রয়েছেন প্রয়াত মেয়র ও সাবেক সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা। অপর পক্ষে রয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন ও তাঁর বলয়ের লোকজন। বর্তমান সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীও শেষ পক্ষটির সঙ্গে রয়েছেন।

তারও আগে আরও চার দফা নগর কমিটির সম্মেলনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে তা পিছিয়ে যায়। ওই সময়ও তৃণমূলের সম্মেলন শুরু হলে দুই পক্ষে বিরোধ দেখা দেয়। পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। তা নিয়ে কেন্দ্রে নালিশও দিয়েছিলেন মহিউদ্দিনপন্থীরা। পরে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করে বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করে।

২০২২ সালে প্রথম নগর কমিটির সম্মেলনের পর থেকে পর্যায়ক্রমে ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটির সম্মেলনের প্রক্রিয়া শুরু করেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এ পর্যন্ত নগর কমিটির আওতাধীন ২৭টি ইউনিট ও ২৯টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়নি। মোট ওয়ার্ড রয়েছে ৪৪ টি। এ ছাড়া ১৫ থানার মধ্যে ১ টির সম্মেলন হয়েছে।

বাকিগুলোর সম্মেলন করার জন্য বৃহস্পতিবার নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় নতুন করে বিরোধের আভাস মেলে। সভায় বক্তব্য দিতে উঠে রেজাউল করিম বলেছিলেন, তৃণমূলের সম্মেলনে বিচক্ষণ ও পরীক্ষিত নেতারা সুযোগ পাননি। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকার সময় যাঁরা রাজপথে ছিলেন, সেই ছাত্রনেতাদের সংগঠনে আনতে হবে। সদস্য সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২০ হাজার। চট্টগ্রামের জনসংখ্যা ৭০ লাখ। এই সংখ্যা বাড়ানো যাবে না কেন, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। পাশাপাশি ইউনিট ও ওয়ার্ডের সম্মেলনের ক্ষেত্রে কয়েকটির প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

এ সময় আ জ ম নাছির মেয়রের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি নেত্রীর নির্দেশনা অনুসারে করছি। আপনি তো এত দিন সভায় আসেননি। কেন্দ্র থেকে জুলাইয়ের মধ্যে তৃণমূলের কমিটি শেষ করতে বলা হয়েছে।’ এই বক্তব্যের পর দুজন বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে অন্য নেতারা তাতে হস্তক্ষেপ করেন। এ ঘটনার পর নতুন করে সংকট দেখা দিয়েছে। সভায় উপস্থিত বেশ কিছু নেতা রেজাউল করিমের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। আবার অনেকে সম্মেলন করার পক্ষে মত দেন।

নতুন করে সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আগেও সম্মেলনকে বানচাল করার চেষ্টা করা হয়েছে। এখন নতুন করে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কিন্তু যেকোনো মূল্যে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৃণমূলের সম্মেলন করা হবে। ২৫ জুন পর্যায়ক্রমে ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। যথাসময়ে সম্মেলন হবে।

সম্মেলন বিষয়ে যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা তো সম্মেলনের বিপক্ষে নই। আমি কিছু সাংগঠনিক প্রশ্ন তুলেছি। সম্মেলন অবশ্যই হবে। কিন্তু কমিটিতে যোগ্য নেতৃত্বের কথা বলেছি।

সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের স্থান দিতে বলেছি। আর সদস্যসংখ্যা বাড়াতে বলেছি। এখানে কোনো ষড়যন্ত্র নেই। যেন একপক্ষীয় কোনো কমিটি না হয়।’